প্রতীকী ছবি

রাসুল (সা.)-এর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলৌকিক ঘটনাগুলোর একটি ‘মেরাজ’। মেরাজ আরবি শব্দ, শাব্দিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন, আকাশপথে ভ্রমণ করা, সোপান ইত্যাদি। রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে রাসুল (সা.) আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। ঐতিহাসিক সেই সফরকেই মেরাজ বলা হয়। 

হিজরতের পূর্বে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী হজরত খাদিজাতুল কুবরা ও চাচা আবু তালেবের ইন্তেকালের পর মক্কার মুশরিকদের নির্যাতন বেড়ে বেড়ে গেল। এ বছরটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের অন্যতম কষ্টের বছর ছিল।

শান্ত্বনার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে শরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় জিবরাইল (আ.) ও মিকাইলের (আ.) সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে মেরাজের সফর করান।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ০১)

মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে ইতিহাস ও তাফসিরগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়-

এক রাতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুয়ে ছিলেন, চোখে কিছুটা তন্দ্রা ছিল,  এ সময় জিরাইল আ. এসে  তার বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করে যমযমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন জায়গামত।

এরপর বিশেষ ক্ষিপ্রগতির সওয়ারী বুরাকের মাধ্যমে মুহুর্তেই নবীজিকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হলো বায়তুল মুকাদ্দাসে।সেখানে তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। 

এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। একে একে সাত আসমানে নবীজিকে নিয়ে গেলেন জিবরাইল আ.। প্রত্যেক আসমানেই তাকে স্বাগত জানালেন সেখানকার দায়িত্বরত ফেরেশতারা। সাত আসমানে সাতজন নবীর সঙ্গে দেখা হলো আল্লাহর রাসুলের। প্রত্যেক নবী তাকে স্বাগত জানিয়ে দোয়া দিলেন।

প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.)- এর সঙ্গে দেখা হলো। জিবরাঈল পরিচয় করিয়ে দিলেন। বাবা আদম নবীজিকে সাদর অভিবাদন জানালেন- মারহাবা, নেককার পুত্র ও নেককার নবী। হযরত আদম (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন।

এরপর দ্বিতীয় আসমানে দেখা হলো দুই খালাত ভাই হজরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-এর সঙ্গে। তাদের সাথে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তৃতীয় আসমানে দেখা হলো হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো এই দুই নবীর মাঝে। নবীজি (সা.) বলেন, হজরত ইউসুফকে যেন দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য ঢেলে দেওয়া হয়েছে!

এরপর চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরীস (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হজরত ইদরীস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। পঞ্চম আসমানে হজরত হারূন (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো।

ষষ্ঠ আসমানে নবীজিকে অভিনন্দন জানালেন হজরত মূসা আ.। এরপর নবীজি সপ্তম আসমানে উঠলেন। সেখানে দেখা হলো হজরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে। জিবরাঈল আ. পরিচয় করিয়ে দিলেন- ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হজরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে সালাম বিনিময় করলেন।

নবীজি বলেন, হজরত ইবরাহীম আ. তখন বাইতুল মামুরে হেলান দিয়ে ছিলেন। বাইতুল মামুর, যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আসে। এরপর এই সত্তর হাজার আর ফিরে আসে না। এভাবে প্রতিদিন সত্তর হাজার করে ফেরেশতাদের নতুন নতুন কাফেলা আসতে থাকে।

এরপর নবীজিকে নিয়ে যাওয়া হলো সিদরাতুল মুনতাহার দিকে। সেই কুল বৃক্ষের একেকটি পাতা হাতির কানের মতো। আর একেকটি ফল মটকার মতো বড় বড়। যখন ওটাকে আল্লাহর বিধান আচ্ছন্ন করে নিল তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। সৃষ্টির কারো সাধ্য নেই তার সৌন্দর্যের বিবরণ দেবার। জিবরাঈল বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। 


এখানে চারটি নহর। দুটি অদৃশ্য আর দুটি দৃশ্যমান। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদীদুটি কোনগুলো? জিবরাঈল বললেন, অদৃশ্যমান দুটি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দুটি হলো নীল নদ ও ফুরাত নদী।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহ আমাকে ওহি প্রদান করেন।

এ সফরে নবীজিকে তিনটি উপহার দেওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করবে— তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৩)