একজন মুমিনের ঈমানদার হওয়ার অন্যতম শর্ত ও দাবি হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জীবনের সবকিছুর থেকে বেশি ভালোবাসা। প্রকৃত ঈমানের দাবি এটিই।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজীকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি, তবে নিজের জানের চেয়ে বেশি নয়। নবিজী বললেন, ওহু! তাহলে তো এখনো (ঈমান পরিপূর্ণ) হয়নি। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! যতক্ষণ না আমি তোমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয় না হব ততক্ষণ তোমার ঈমান পূর্ণ হবে না।

কিছুক্ষণ পর হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর শপথ! এখন আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে গেছেন। নবিজী বললেন, ‘হ্যাঁ’, ওমর! এখন তোমার ঈমান পূর্ণ হয়েছে।’ (বুখারি ১৪)

আরেক হাদিসে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হব।’ (বুখারি)

নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সাহাবিরা এমন সব নজির দেখিয়েছেন তা পৃথিবীতে বিরল, উম্মতের অন্য কেউ তা প্রদর্শন করতে সক্ষম নয়। নবীজির প্রতি সাহাবিদের ভালোবাসা নিয়ে বর্ণিত হয়েছে, 

মহানবী (স.)-এর প্রতি সাহাবিদের ভালোবাসা দেখার পর মক্কায় গিয়ে উরওয়া ইবনে মাসউদ মন্তব্য করেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি কায়সার, কিসরা এবং নাজ্জাশির মতো সম্রাটদের কাছে গিয়েছি। আল্লাহর শপথ! আমি কোনো বাদশাহকে তার সঙ্গীদের কাছ থেকে এতো মর্যাদা লাভ করতে দেখিনি, যতটা সম্মান ও মর্যাদা মুহাম্মদ (স.)-কে লাভ করতে দেখেছি। ..তিনি কোনো আদেশ করলে সেই আদেশ পালনে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিনি অজু করতে শুরু করলে পরিত্যক্ত পানি গ্রহণে সঙ্গীদের মধ্যে হুড়াহুড়ি লেগে যায়। তিনি কথা বলতে শুরু করলে তাঁর সঙ্গীরা কণ্ঠস্বর নিচু করে ফেলে। শ্রদ্ধার কারণে সঙ্গীরা তাঁর প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় না।’ (আর রাহীকুল মাখতুম)

ওহুদের যুদ্ধের দিন মক্কার মুশরিকদের পক্ষ থেকে যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কোনও আক্রমণ আসছিলো, সাহাবিরা তা বুক পেতে বরণ করতেন এবং মহানবীকে (সা.)-কে রক্ষা করতেন আর একইসঙ্গে শত্রুর ওপরও আঘাত হানতেন।

হজরত আবু দুজানা (রা.) অনেকক্ষণ পর্যন্ত নিজের শরীর দিয়ে মহানবীর (সা.) শরীর মোবারক আড়াল করে রেখেছিলেন আর যে তীর বা পাথরই আসছিল তিনি সেটির সামনে নিজের শরীর পেতে দিতেন। এভাবে তার শরীর তীরের আঘাতে ঝাঝরা হয়ে যায় কিন্তু তিনি (রা.) উফ্ শব্দটিও করেননি যেন এমন না হয় যে, তার শরীর নড়ে যাওয়ার ফলে মহানবীর (সা.) শরীরের কোন অংশ ঝুঁকির মুখে পড়ে আর কোন তীর এসে তার গায়ে বিদ্ধ হয়। 

হজরত তালহা (রা.) মহানবীকে (সা.) রক্ষা করার জন্য অনেকগুলো আঘাত নিজ দেহে বরণ করেছেন এবং এই প্রচেষ্টাতেই তার হাত অসাড় হয়ে সারা জীবনের জন্য অকেজো হয়ে গেছে। তাঁর শরীরে তীর ও তরবারির ৮০টিরও বেশি আঘাত লেগেছিল। (জাদুল মাআদ: ২/৯৫)

এছাড়াও হজরত আবু বকর রা. বিশ্বনবী (সা.) এর ভালোবাসায় ধন-সম্পদসহ সব কিছুই ত্যাগ করেছিলেন। নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়ানোতেই পেতেন সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি। মক্কা থেকে মদিনার সফরের সময় ভেড়ার দুধ পানে পিপাসা নিবারণ করলেন প্রিয় নবী আর তৃপ্ত হলেন হজরত আবু বকর (রা.)। তিনি বলেন, ‘মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার সময় আমরা এক রাখালের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময় বিশ্বনবী (সা.) খুব পিপাসার্ত। আমি ভেড়ার দুধ দোহন করলাম। তিনি তা পান করলেন, আমি খুব আনন্দিত হলাম। সত্যি বলতে কি, নবীজির দুধ পান দেখে আমি তৃপ্ত হয়ে গেলাম।’ (বুখারি)

হজরত আবু বকর (রা.) মৃত্যু শয্যায় থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলেন- হে আয়েশা! নবীজী কোনদিন ইন্তেকাল করেছিলেন? হজরত আয়েশা (রা.) জানালেন- ‘সোমবার’। তিনি বললেন, আজ কী বার? জবাব এলো- সোমবার। তিনি বললেন, হায় যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো!’ (বুখারি)

এনটি