প্রতীকী ছবি

ইসলাম মা-বাবার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে। পরিবারেও মা-বাবার মর্যাদা ও সম্মান সবার ওপরে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বনি ইসরাইলে ঘোষণা করেন-

‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তিনি (আল্লাহ) ছাড়া কারো উপাসনা করো না এবং বাবা-মার প্রতি উত্তম আচরণ করো। তাদের একজন কিংবা উভয় যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ্ বলো না এবং তাদের ভর্ৎসনা করো না বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র ভাষায় কথা বলো। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাকো। আর বলো- ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’ (সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩-২৪)

মা-বাবার সেবার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা উচিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি’ (সুরা আন কাবুত, আয়াত: ৮)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তিনবার বললেন, তার নাসিকা ধুলোয় ধুসরিত হোক! সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কার ব্যাপারে এসব বদ দোয়া করছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা যে কোনো একজনকে বার্ধক্যে উপনীত অবস্থায় পেল তবুও সে (তাদের খেদমত করে) জান্নাতের পথ সুগম করতে পারল না’ (মুসলিম : ২৫৫১)।

আলেমরা বলেন, সন্তানদের উচিত হাদিসে বর্ণিত আমলের মাধ্যমে মা-বাবাকে সন্তুষ্ট রাখা এবং তাদের হক আদায়ে চেষ্টা করা ও এর মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি রাখা। কিন্তু সন্তানকে মা-বাবা যেভাবে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে মানুষ করেছেন কারও পক্ষে এর হক আদায় করা সম্ভব নয়।

কিন্তু বিভিন্ন লাইব্রেরিতে আমল বিষয়ক কিছু কিছু বই রয়েছে, যেখানে মা-বাবার হক আদায় হয়ে যায় এমন একটি দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী চিন্তাবিদেরা একে একেবারে ভিত্তিহীন বলেন।

আলেমরা বলেন, মা-বাবার হক আদায় হয়ে যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এমন কোনও দোয়া বর্ণিত হয়নি। এর নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ নেই। মূলত বিশর ইবনে হুসাইন যুবায়ের (ইবনে আদী) নাম এক বর্ণনাকারী একটি জাল পুস্তিকা বর্ণনা করেন, যেখানে একশত পঞ্চাশটির মতো জাল বর্ণণা রয়েছে। এখান থেকে এমন ভিত্তিহীন একটি দোয়া বাজারে প্রচলিত মোকসেদুল মুমীন নামের বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

আলেমরা বলেন, দোয়ার বর্ণনাটির সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়; সুতরাং তা হাদীস হিসেবে বর্ণনা করা বৈধ নয়। এবং বর্ণনাটি অনির্ভরযোগ্য হওয়ার সাথে সাথে এতে বর্ণিত কথাটিও আপত্তিকর; নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কথা বলতে পারেন না। কারণ, ইসলামী শরীয়তে মা-বাবার হক অনেক গভীর ও ব্যাপক। কেবলমাত্র একটি দোয়ার মাধ্যমে তা আদায় হবার নয়। (তানযীহুশ শরীআহ, ইবনে ইরাক ২/৩২৯; যাইলুল লাআলিল মাসনূআহ, সুয়ূতী, পৃ. ৬০৫, বর্ণনা ৭৩৮)

কোরআন হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন,  মানুষের পক্ষে মা-বাবার হক পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়, কিন্তু মানুষ চাইলে তাদের সেবা ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করাতে পারে। মানুষ যে মা-বাবার হক পরিপূর্ণ আদায় করতে পারবে না কখনও নবীজী বিষয়টি উল্লেখ করার সাথে সাথে একটি উদাহরণও দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لَا يَجْزِي وَلَدٌ وَالِدًا، إِلّا أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكًا فَيَشْتَرِيَهُ فَيُعْتِقَهُ

কোনো সন্তানের পক্ষে বাবার প্রতিদান দেওয়া (বা হক আদায় করা) সম্ভব নয়; হাঁ, যদি তাঁকে গোলাম অবস্থায় পায় আর খরিদ করে আযাদ করে দেয়! -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫১০)

বাবার বিষয়েই যদি এভাবে বলা হয়, তাহলে মায়ের বিষয়ে নবীজী কী বলতেন। কারণ, ইসলামে মায়ের হক বাবার চেয়ে অনেক বেশি।

একবার ইবনে উমর রা.-কে এক ব্যক্তি বলল-

حملت أمي على رقبتي من خراسان حتى قضيت بها المناسك، أتراني جزيتها؟ قال: لا، ولا طلقة من طلقاتها

আমার মাকে আমি খুরাসান থেকে মক্কা পর্যন্ত কাঁধে বহন করে এনেছি এবং কাঁধে করেই হজ করিয়েছি। আপনার কী মত- আমি কি আমার মায়ের প্রতিদান দিতে পেরেছি?

ইবনে উমর রা. বললেন, না, মোটেও না; তুমি মায়ের প্রসব বেদনার একবারের ‘আহ্’-এরও প্রতিদান দিতে পারনি। ( বিররুল ওয়ালিদাইন, ইবনুল জাওযী, পৃ. ৩)

এনটি