আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও সওয়াব
পবিত্র কোরআনুল কারিমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আয়াত আয়াতুল কুরসি। এ আয়াত পাঠের ফজিলত অসংখ্য। পাঠকদের সুবিধার্থে হাদিস শরিফে বর্ণিত আয়াতুল কুরসির ফজিলতগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।
কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত
উবাই বিন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) উবাই বিন কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার কাছে কোরআন মজিদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়ুল কাইয়ুম…) তারপর রাসুল (সা.) নিজ হাত দিয়ে তার বুকে আঘাত করে বলেন, আবুল মুনজির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৯৬)
বিজ্ঞাপন
শয়তান থেকে বাঁচার আমল
উবাই বিন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রয়েছে, তার একটি খেজুর রাখার থলি ছিল। ক্রমে সেটা থেকে তার খেজুর কমতে থাকত। একরাতে তিনি পাহারা দেন। হঠাৎ যুবকের মতো এক জন্তু দেখতে পেলেন, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয়। তিনি বলেন, তুমি জিন না মানুষ? সে বলে, জিন।
উবাই বিন কাব (রা.) তার হাত দেখতে চাইলে সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন, এটা জিনের সুরত। সে (জন্তু) বলে, জিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী। তিনি বলেন, তোমার আসার কারণ কী? সে বলে, আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। সাহাবি বলেন, তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? সে বলে, সুরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়ুল কাইয়ুম), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসুল (সা.) এর কাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। রাসুল (সা.) খবিস সত্য বলেছে।’ (সহিহ ইবন হিব্বান, হাদিস : ৭৯১)
ফেরেশতা নিযুক্তকারী আয়াত
আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসুল (সা.) আমাকে জাকাতের সম্পদ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন দেখতে পেলাম একজন আগন্তুক সদকার মাল চুরি করছে। তখন আমি তার হাত ধরে ফেললাম এবং বললাম- আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলল, আমি খুব অভাবী আর আমার অনেক প্রয়োজন। তার এ কথা শুনে দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম।
পরদিন সকালে রাসুল (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসুল, লোকটি নাকি অনেক অভাবী তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (সা.) বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আমি আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল, তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি খুব অভাবী, আমার পরিবার আছে, আমি আর আসব না। তখন আমি তাকে দয়া করে এবারও ছেড়ে দিলাম।
পরদিন আবারও রাসুল (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি এবারও উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসুল, লোকটি নাকি অনেক অভাবী— তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (সা.) এবারও বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, আর সে আবার আসবে। তৃতীয় দিনও আমি চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল, তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব, তুমি বার বার প্রতিশ্রুতি করেও চুরি করতে এসে থাকো। তখন (অবস্থা বেগতিক দেখে) সে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু কথা জানাবো— যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আমি বললাম, সেগুলো কী? তখন সে বলল, যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, যে তোমার সঙ্গে থাকবে। আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন।
পরদিন রাসুল (সা.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে । রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)-কে আরো বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রাকে বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি
আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাঁধা থাকবে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৯৪৪৮; তাবারানি, হাদিস : ৭৮৩২)
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।