প্রতীকী ছবি

শীতের দিন ঠাণ্ডার কারণে অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকের অনেকের। এ সময় ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার কমিয়ে দেন অনেকে। তবে দিনে পাঁচবার নামাজ আদায়ের জন্য পানির ব্যবহার করতে হয়। 

ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার যদি কারও জন্য ক্ষতির কারণ হয় তাহলে তার জন্য তাহলে তার জন্য গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। আর যদি কেউ পানি ব্যবহারে একেবারে অক্ষম হয়– পানি না থাকার কারণে কিংবা পানি থাকলেও এর ব্যবহারে রোগের ক্ষতি হতে পারে তাহলে সে ব্যক্তি পানি দিয়ে অজু-গোসল করার পরিবর্তে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে পারেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا

‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ মলত্যাগ করে আসে বা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে।’-(সূরা মায়েদা: ৬)

এ আয়াতে দলিল রয়েছে যে, অসুস্থ ব্যক্তি পানি ব্যবহার করার ফলে যদি তার মৃত্যু ঘটা, কিংবা রোগ বেড়ে যাওয়া কিংবা আরোগ্য লাভ বিলম্ব হওয়ার আশংকা থাকে সেক্ষেত্রে তিনি তায়াম্মুম করতে পারবেন।

তায়াম্মুম বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি

আটটি শর্ত একসঙ্গে পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না।

এক. নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ১/২৩২)

দুই. এমন কোনো ওজর (অপারগতা) পাওয়া যেতে হবে, যার কারণে তায়াম্মুম করা বৈধ হয়। তায়াম্মুম বৈধ হওয়ার অপারগ পরিস্থিতি হলো—

(ক) ব্যক্তি ও পানির মধ্যের দূরত্ব এক মাইল বা এর চেয়ে বেশি হওয়া। (দারাকুতনি : ৭৩১, ৭৩৪)

(খ) পানি ব্যবহারের কারণে রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা অথবা প্রাণ বা অঙ্গহানির আশঙ্কা হলে। (দারাকুতনি : ৭৩১; কিতাবুল   আসার : ৭৪; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১১০৫)

(গ) পানি এত কম যে ব্যবহার করে ফেললে নিজে অথবা অন্যরা পিপাসাকাতর হয়ে পড়বে। (সুনানে কুবরা : ১১৪৯)

(ঘ) পাশেই কূপ বা পুকুর আছে, কিন্তু পানি এত নিচে যে তা থেকে পানি উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। (সহিহ বুখারি : ২/৬১)

(ঙ) পানি কাছেই আছে, কিন্তু দুশমন অথবা ভয়ংকর কোনো পশু-প্রাণীর কারণে পানি অর্জন করতে অপারগ (সহিহ বুখারি : ২/৭২)

(চ) প্রবল ধারণা যে অজু করতে গেলে ঈদ বা জানাজার নামাজ ছুটে যাবে, তখন তায়াম্মুম করা যাবে। কারণ সেগুলোর কাজা বা বিকল্প নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৩/৩০০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১১৫৮৬)

তিন. তায়াম্মুম পবিত্র মাটি দ্বারা হতে হবে। অথবা মৃত্তিকাজাত বস্তু দ্বারা। যেমন—পাথর, বালু, ধুলা ইত্যাদি। সুতরাং গাছপালা, সোনা, রুপা ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম জায়েজ নেই। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১৭১৬)

চার. পুরো মুখমণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করা। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩; দারাকুতনি : ৭১২)

পাঁচ. হাতের পুরো তালু অথবা বেশির ভাগ দ্বারা মাসেহ করা। যদি কেউ দুই আঙুল দ্বারা মাসেহ করে তাহলে তায়াম্মুম সহিহ হবে না। (দারাকুতনি : ৭১২; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৩৬৮)

ছয়. উভয় হাতের তালু মাটির ওপর দুইবার মারা—একবার চেহারা মাসেহের জন্য, আরেকবার উভয় হাত মাসেহের জন্য। একই স্থানে দুইবার মারলেও তায়াম্মুম হয়ে যাবে। তেমনি যদি শরীরে মাটি লেগে থাকে তাহলে তায়াম্মুমের নিয়তে মাসেহ করলেও তায়াম্মুম হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৬১)

সাত. মাসেহ করার সময় চামড়ার ওপর কোনো প্রতিবন্ধক বস্তু থাকতে পারবে না; যেমন—মোম, চর্বিজাত দ্রব্য ইত্যাদি। যদি থাকে তাহলে ওসব বস্তু অপসারণ করা আবশ্যক; অন্যথায় তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না। (বায়হাকি : ৩৬৭)

আট. তায়াম্মুম চলাকালে তায়াম্মুমবিরোধী কোনো বিষয় না থাকা বা কাজ না করা; যেমন—নারীদের মাসিক, নেফাস অথবা প্রস্রাব-পায়খানা চলাকালে তায়াম্মুম করা। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করলে তা শুদ্ধ হবে না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ১/১৮১)

এনটি