ছবি : সংগৃহীত

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিভাজনীয় ইস্যু নিয়ে বড় রায় দিয়েছে মালেশিয়ার একটি আদালত। বুধবার (১০ মার্চ) দেওয়া রায়ে আদালতটি জানিয়েছে, অমুসলিমরা সৃষ্টিকর্তা বোঝাতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই রায়ে দুইটি জাতিগত মালয় রাজনৈতিক দল তত্ক্ষণাত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আন্নু জাভিয়ার বলেছেন, ৩৫ বছর ধরে হাইকোর্ট খ্রিস্টান প্রকাশনা কর্তৃক আল্লাহ ও আরও তিনটি আরবি শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আদালত এখন বলেছে যে, সব শব্দ মালয়েশিয়ানরা ব্যবহার করতে পারে। আজকের সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ার অমুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারের মৌলিক স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত।

সরকার এর আগে বলেছিল যে মুসলমানরা অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে এমন বিভ্রান্তি এড়াতে শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য আল্লাহ শব্দটি সংরক্ষিত রাখা উচিত। এই ধরনের অবস্থান মালয়েশিয়ার জন্য ভিন্ন রকম। পাশাপাশি যেসব সংখ্যা ঘরিষ্ঠ মুসলিম দেশে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান রয়েছে, সেসব দেশে এটি তেমন কোনো সমস্যা নয়।

মালয়শিয়ার খ্রিস্টান নেতারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞাটি অযৌক্তিক। কারণ, মালয় ভাষাভাষী খ্রিস্টানরা তাদের বাইবেল, প্রার্থনা ও গানে আরবি থেকে প্রাপ্ত মালয় শব্দ ‘আল্লাহ’ দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহার করেছেন। ২০১৪ সালে দেশটির ফেডারেল আদালতের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই হাই কোর্টের রায়টি হাজির হয়েছিল। তখন রোমান ক্যাথলিক চার্চের আইনি চ্যালেঞ্জের পরে সরকার নিষেধাজ্ঞাকে বহাল রাখে, যেহেতু তারা মালয় ভাষার নিউজলেটারে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করেছিল।

মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা ৩২ মিলিয়ন। এর মধ্যে জাতিগত চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘুদের বিশাল অংশ রয়েছে। এদের মধ্যে মুসলমানরা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। খ্রিস্টানরা জনসংখ্যার প্রায় দশ শতাংশ। মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ খ্রিস্টান ইংরেজি, তামিল বা বিভিন্ন চীনা উপভাষায় উপাসনা করেন। সেই ভাষায় তারা ইশ্বর শব্দ উল্লেখ করেন। তবে বর্নিও দ্বীপের কিছু মালয়-ভাষী মানুষ ইশ্বর বোঝাতে আল্লাহ শব্দ ছাড়া তাদের আর কোনো শব্দ নেই।

১৯৮৬ সালে সরকারি নির্দেশে তিনটি শব্দ— মক্কায় বিশ্ব মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা, আল্লাহর প্রিয়ঘর কাবা ও ‘সালাত’ বা প্রার্থনা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দ্য ইউনাইটেড মালয়েশিয়া ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন এবং রক্ষণশীল ইসলামিক পার্টি যৌথভাবে বিবৃতিতে দিয়েছে যে, তারা আদালতের রায়কে উদ্বেগের সঙ্গে দেখে। পাশাপাশি সরকারের কাছে দাবি করেছে যে, আবেদনটি যেন আপিল আদালতে হস্তান্তর করা হয়।

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানা যায়নি। তবে দ্য স্টার পত্রিকা উল্লেখ করেছে যে সরকারি পরামর্শ শামসুল বোল-হাসান বলেছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী খ্রিস্টান উপকরণগুলোতে এই চারটি শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে---- যতক্ষণ না স্পষ্টভাবে এটি বলা হয় যে, এটি কেবল খ্রিস্টানদের ও ক্রুশের প্রতীক হিসেবে প্রদর্শিত হয়।

প্রসঙ্গত, এই রায়টি একজন খ্রিস্টান নারীর দীর্ঘ আইনি চ্যালেঞ্জের ফলস্বরূপ। ২০০৮ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফিরাকালীন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আল্লাহ শব্দযুক্ত তার ধর্মীয় উপকরণগুলো জব্দ করেছিল।