প্রতীকী ছবি

আরব ভূখণ্ড থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে ইসলাম। মক্কার নির্জন হেরা গুহায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ ‘ইকরা’-এর মাধ্যমে যার সূচনা। এর পৃথিবীর বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘ ২৩ বছর মক্কার কাফেরদের কষ্ট-যাতনা সহ্য করেছেন তিনি। তার ওফাতের পর পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছন সাহাবায়ে কেরাম। 

ব্যাপকভাবে ইসলামের বিকাশ ঘটে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা. এর শাসনকাল থেকে। তার সময়ে সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ মুসলিমদের অধীনে আসে। তার শাসনামলেই জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়।

সাহাবাদের যুগ থেকে বিভিন্ন মুসলিম শাসনামল, দেশ-মহাদেশে, বর্তমান সময়কাল, এখনও বিভিন্ন ভূখণ্ড, জনপদের মানুষ নতুন করে জানছে ইসলামকে। শান্তি খুঁজে নিচ্ছে রবের একমাত্র মনোনীত ধর্মে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম আগমনের তথ্য তুলে ধরা হল এখানে-

নবীজির যুগে ইসলাম

৬১০ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় (প্রাচীন নাম হাবশা) ইসলাম পৌঁছে প্রিয় নবী (সা.)-এর যুগে। বিখ্যাত সাহাবি উসমান (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র দল হাবশায় ইসলাম পৌঁছায়।

সাহাবিদের যুগে ইসলাম প্রচার

সিরিয়ার দামেস্ক ও হিমসে ইসলামের আগমন ঘটে দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে। সাহাবি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে বিজয় হওয়ার মাধ্যমে।

রাশিয়ার দরবন্দেও ইসলাম পৌঁছে দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে। মুসলিমরা আরমেনিয়া ও আজারবাইজান জয় করে দরবন্দে আগমন করেন। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, দরবন্দ বিজিত হয় সাহাবি সুরাকা ইবনে আমর (রা.)-এর নেতৃত্বে। কোনো কোনো বর্ণনায় সালমান ইবনে বারিআ (রা.)-এর নেতৃত্বে বিজিত হয়।

রাশিয়ার দাগিস্তানের বেশির ভাগ এলাকা সাহাবায়ে কেরামের যুগে বিজিত হয় এবং তখন থেকেই ইসলামের আওতাভুক্ত হয়। আলবেনিয়ায় ইসলাম বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্রথম শতাব্দীতেই পৌঁছেছে।

ইরাকেও ইসলাম পৌঁছায় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর নেতৃত্বে বিজিত হওয়ার মাধ্যমে।

আজারবাইজানে ইসলাম আগমন করে দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে উতবা ইবনে ফারকাদ আস-সালামির নেতৃত্বে। তিনি আজারবাইজানের প্রধান শহর তাবরিজ বিজয় করার মাধ্যমে ইসলামের সূচনা করেন। ইরানের তেহরান ও নিশাপুরে ওমর (রা.)-এর শাসনামলে বিজিত হয়ে ইসলাম পৌঁছে।

আলজেরিয়ায় ইসলাম পৌঁছে সাহাবি উকবা ইবনে নাফে (রা.)-এর নেতৃত্বে বিজিত হওয়ার মাধ্যমে। তিউনিসিয়ায় ইসলাম পৌঁছে সাহাবি মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনামলে সাহাবি উকবা ইবনে নাফে (রা.)-এর নেতৃত্বে বিজিত হওয়ার মাধ্যমে। মরক্কোয় ইসলামের আগমন ঘটে সাহাবি মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনামলে (৬৮৩ খ্রি.) সাহাবি উকবা ইবনে নাফে (রা.)-এর নেতৃত্বে বিজিত হওয়ার মাধ্যমে।

চীনে সর্বপ্রথম ইসলামের আগমন ঘটে সাহাবি সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের মাধ্যমে। তাঁরা সেখানে ব্যবসা করার জন্য প্রথমে গমন করেন।

মুসলিম বীরদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার

৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ সম্রাট রডারিককে পরাজিত করে স্পেন বিজয় করেন। তাঁর মাধ্যমে স্পেনে ইসলাম পৌঁছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে শেখ ইউসুফের মাধ্যমে ইসলাম পৌঁছেছে। মিয়ানমারে ৬৫০ সালে আরব ও ইয়েমেনি বণিক দলের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইসলাম পৌঁছেছে।

জাপানে ১৮৯১ সালে জনৈক জাপানি মুসলিম হওয়ার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইসলাম পৌঁছেছে। উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সমগ্র অঞ্চলেও ইসলাম পৌঁছে দ্বিতীয় শতাব্দীতে।

বোখারা, সমরখন্দ, খাওয়ারিজম ও ফরগনায় ৭০৫-৭১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ওলিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে সেনাপতি কুতাইবা ইবনে মুসলিমের নেতৃত্বে বিজিত হওয়ার মাধ্যমে ইসলামের সূচনা হয়।

লাতিন আমেরিকার পানামায় ১৯ শতকের শেষে পানামা ক্যানেল নির্মাণের সময় বাঙ্গাল এবং আরব থেকে অনেক মুসলিম এসে বসতি স্থাপন করে। তাদের মাধ্যমেই তখন ইসলাম পৌঁছায়।

আরব বণিক ও বিভিন্ন ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার

রাশিয়ার ট্রান্স ককেশাসে সপ্তম শতাব্দীতেই আরব বণিকদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইসলাম পৌঁছে। আর ভগলা, উরালস ও মধ্য এশিয়ায় ৭৫১ খ্রিস্টাব্দে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলাম পৌঁছে।

বুরুন্ডিতে ইসলামের আগমন ঘটে ১৮৯৫ সালে। পর্তুগিজ দস্যুরা যখন পূর্ব আফ্রিকার ইসলামী রাষ্ট্র মোমাসা ও জানজিবার আক্রমণ করে দখল করে নেয়, তখন ওই দেশের মুসলিমরা বুরুন্ডিতে অভিবাসী হিসেবে আগমন করে।

ব্রিটেনে ৭৫৭ সাল থেকেই মুসলমানদের পদচারণ শুরু হয়েছে। আর  king offa (৭৫৭-৭৯৬)-এর শাসনামল ছিল মুসলিম শাসনামল।

ফিলিপাইনে ইসলামের আগমন ঘটে ১৩০০ শতাব্দীর শুরুতে। নিউজিল্যান্ডে ১৯১০ সালে সর্বপ্রথম ভারতের গুজরাট থেকে  Esup Musa নামে এক মুসলিম জীবিকার সন্ধানে যান। এর পর থেকেই সেখানে ইসলামী সমাজ গড়ে ওঠে।

আইভরি কোস্টে সপ্তম শতাব্দীতেই ইসলাম পৌঁছেছে। অন্য একদল গবেষকের মতে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আরব বণিকদের মাধ্যমে ১৪০০ শতাব্দীতে আইভরি কোস্টে ইসলামের আগমন ঘটে।

ঘানায় ১৯০০ শতকের শুরুতে ভারত ও আফ্রিকা থেকে সর্বপ্রথম মুসলিমদের আগমন ঘটে।

আফ্রিকা মহাদেশের তানজানিয়া রাষ্ট্রে অষ্টম শতাব্দীতে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রবেশ করে। এরপর আরব ব্যবসায়ীরা সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

ইন্দোনেশিয়ায় ১২০০ শতাব্দীতে নৌযানে করে আরব বণিকদের সঙ্গে কয়েকজন দরবেশের আগমন ঘটে। তাঁদের মাধ্যমেই সেখানে ইসলাম পৌঁছে।

ফ্রান্সে ইসলাম পৌঁছে ৭৩২ সালে। মুসলিমরা ফ্রান্সে আগমন করে দ্রুত  Arles, Narbonne, Marsellle, আরমহড়হ প্রভৃতি শহরে প্রাধান্য বিস্তার করে।

সুইজারল্যান্ডে ৯১১ সালে ইসলাম পৌঁছেছে। ইসলাম সম্পর্কে ইতিহাসে জানা যায়, মুসলিমরা ফ্রান্স, ইতালি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে, তখন মুসলমানরা সুইজারল্যান্ডে পা রাখেন। সর্বপ্রথম তাঁরাই সেখানে ইসলাম পৌঁছান।

পোল্যান্ডে ইসলামের আগমন ঘটে ১৩০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি।

কোরিয়ায় রাজা হাইউন জংয়ের রাজত্বকালে ১৭তম বর্ষে এবং লিরাজ বংশের রাজা ডান জংয়ের শাসনের সপ্তম বর্ষে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের আগমন ঘটে।

আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় ১৮৮৪ সালে ইসলামের আগমন ঘটে।

ইউরোপের কসোভো ও মোটাহিয়ায় ১৪ শতকে ইসলামের আগমন ঘটে।

উজবেকিস্তানে ৫৫ হিজরিতে সাইয়েদ ইবনে ওসমানের নেতৃত্বে উজবেকিস্তান বিজয় করার মাধ্যমে ইসলামের আগমন ঘটে।

ফিজিতে ইসলামের আগমন ঘটে ভারতীয় কিছু মুসলিম চাষির মাধ্যমে। ইংরেজরা তাঁদের ফিজিতে নিয়ে গিয়েছিল।

তুর্কিদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার

যুগোস্লাভিয়ার মেসিডনিয়ায় ১৩৮১ সালে তুর্কি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ইসলামের আগমন ঘটে। অন্য একদল ঐতিহাসিক বলেন, তুর্কি সেনাবাহিনীর ২০০ বছর আগে আরবীয় গবেষকদের মাধ্যমে ইসলাম পৌঁছে।

 সূত্র : বিশ্বময় ইসলামের পুনর্জাগরণ, দেশ-দেশান্তর

এনটি