ইসলামের স্তম্ভ কয়টি ও কী কী?
আল্লাহ তায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।’ -(সুরা আল ইমরান : ১৯)
ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি বা স্তম্ভ পাঁচটি। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এই পাঁচটি বিষয় জানা এবং এর ওপর বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। একজন মুসলমানের জন্য এই পঞ্চস্তম্ভের কোনও একটিও অস্বীকারের সুযোগ নেই। অনথ্যায় তাকে মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হবে না।
বিজ্ঞাপন
বিখ্যাত সাহাবি হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা, হজ পালন করা এবং রমজান মাসের রোজা পালন করা। -(সহীহ: বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিজি ২৬০৯, নাসায়ী ৫০০১, আহমাদ ৬০১৫, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৮০)
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যাক্তিই আমার এ আহবান শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে। -(সহীহ মুসলিম – ২৮৩)
ইসলামের এই পঞ্চস্তম্ভের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো-
কালিমা
কালিমার মর্মকথা হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই—এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মুখে উচ্চারণ করা এবং এর দাবি অনুযায়ী আমল করা। পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর নিয়ে আসা শরিয়ত মোতাবেক আমল করা। এবং তিনি যেসব বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকা।
এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) একবার ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঈমান কাকে বলে?’ জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমান হচ্ছে- আপনি বিশ্বাস স্থাপন করবেন আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো ও মন্দের প্রতি। এই হলো ঈমান।’ (বুখারি: ৫০)। ঈমানের এই ছয়টি বিষয়কে ইসলামের পরিভাষায় ‘ঈমানে মুফাসসাল’ অর্থাৎ ‘ঈমানের বিস্তারিত পরিচয়’ বলা হয়।
আরও পড়ুন
নামাজ
ইবাদতসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। এটি এমন এক ইবাদত, যা বিশেষ কিছু কথা ও কর্মকে শামিল করে, ‘আল্লাহু আকবার’ দিয়ে সালাত শুরু হয় এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে শেষ হয়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সবার জন্য ফরজ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘নামাজ’। (বুখারি ও মুসলিম)। আরও বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে নেন।’ (বুখারি : ১৮)। নবুয়তের দশম বছর পবিত্র মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। অস্বীকার করা কুফুরি।
জাকাত
জাকাত, শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, বেশি হওয়া। নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত সম্পদ ব্যয় করার নাম জাকাত। কোরআনে বহু স্থানে নামাজের সঙ্গে জাকাতের আলোচনা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
অতএব জাকাত ফরজ এমন প্রত্যেক মুমিনের উচিত সময়মতো তা আদায় করা।
রোজা
রোজার আরবি হলো সিয়াম। সিয়ামের শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। পুরো রমজান মাস সিয়াম পালন করা ফরজ। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা রয়েছে।
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)
হজ
হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। নির্ধারিত শর্তসহ নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদত করার জন্য মক্কায় গমনের ইচ্ছা করাকে হজ বলে। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর গোটা জীবনে একবার হজ করা ফরজ।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত, ২৭)
এনটি