মা-বাবার অসন্তুষ্টি সন্তানের জীবনে যে ক্ষতি বয়ে আনে
মা-বাবা শত কষ্ট-যাতনা সহ্য করে সন্তানকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন। পৃথিবীতে নির্মোহ ভালোবাসার যত উদারহণ, দৃষ্টান্ত সব সন্তান-পিতা-মাতার সম্পর্ককেই জড়িয়ে। এ ভালোবাসায় কোনও খাঁদ থাকে না। ইসলামে মা-বাবার সম্মান সবকিছুর ওপরে। সন্তানের জীবনে মা-বাবার রাগ-গোস্বা-সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে।
বর্তমান সময়ে মা-বাবার অবাধ্যতা ও তাদের প্রতি সন্তানের দুর্বব্যহার ও খারাপ আচরণের পরিমাণ ব্যাপকহারে বেড়েছে। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শোকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শোকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১)
আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশের পরপরই তিনি বলছেন- ‘মা-বাবার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে।’ এর দ্বারাই বোঝা যায়, মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের গুরুত্ব কত!
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা) বলেন, প্রতিপালকের সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত। (আল-আদাবুল মুফরাদ, ২)
যেভাবে মা-বাবার দোয়া সন্তানের কল্যাণে আসে, তেমনি তাদের বদদোয়াও তার অকল্যাণ ডেকে আনে। কোনো সন্তান তার মা-বাবার অবাধ্য হওয়ার কারণে মা-বাবা তাকে কোনো বদদোয়া বা অভিশাপ দিলে তা তার সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনবে।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিনটি দোয়া কখনো নামঞ্জুর করা হয় না—মা-বাবার দোয়া সন্তানের জন্য, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া। ’ (সাহিহুল জামি : ৩/৬৩)
পিতা-মাতা বিধর্মী হলেও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার বজায় রাখতে হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, কুরাইশদের সঙ্গে সন্ধির দিনে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেসা করলাম, আমি কি তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, সদ্ব্যবহার কর, (বোখারি)।
মা-বাবার অসন্তুষ্টি সন্তানের জন্য কতটা ক্ষতি বয়ে আনে হাদিসের একটি ঘটনার মাধ্যমে তা সহজেই অনুমান করা যাবে।
এবিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলাম পূর্ব যুগে জুরাইজ নামক জনৈক ইবাদতগুজার ব্যক্তি কোনো এক গির্জায় ইবাদত করত। একবার তার মা তার গির্জায় এসে তাকে ডাকতে শুরু করল। বলল, হে জুরাইজ! আমি তোমার মা। তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। তার মা তাকে নামাজ পড়তে দেখল।
তখন সে তাঁর ডাকে বলল, হে আল্লাহ! আমার মা এবং আমার নামাজ! এ কথা বলেই সে নামাজে রত থাকল। এভাবে তার মা তিন দিন তাকে ডাকল এবং সে প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে একই আচরণ দেখাল।
তৃতীয় দিন তার মা তাকে এই বলে বদদোয়া করল, হে আল্লাহ! আপনি আমার ছেলের মৃত্যু দেবেন না যতক্ষণ না সে কোনো দুশ্চরিত্রা নারীর চেহারা দেখে। আল্লাহ তাআলা তার মায়ের বদদোয়া কবুল করেন।
জনৈক মেষচারক তার গির্জায় রাত যাপন করত। একবার এক সুন্দরী নারী গ্রাম থেকে বের হয়ে এলে সে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর ওই নারী একটি ছেলে জন্ম দেয়। ওই নারীকে সন্তানের বাবার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, সন্তানটি ইবাদতগুজার ব্যক্তির।
এ কথা শুনে সাধারণ জনগণ কুড়াল-শাবল নিয়ে গির্জায় উপস্থিত হয়। তারা গির্জায় এসে তাকে নামাজ পড়তে দেখে তার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি, বরং গির্জাটি ধ্বংস করার কাজে লেগে গেল। সে এই কাণ্ড দেখে গির্জা থেকে নেমে এলো। তখন তারা তাকে বলল, কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে এই নারীকে জিজ্ঞেস করো।
ইবাদতগুজার ব্যক্তি মুচকি হেসে বাচ্চার মাথায় হাত রেখে বলল, তোমার বাবা কে? বাচ্চাটি বলল, মেষচারক। জনগণ তা শুনে তাকে বলল, আমরা তোমার ধ্বংসপ্রাপ্ত গির্জা সোনা-রুপা দিয়ে বানিয়ে দেব। সে বলল, তা করতে হবে না, বরং তোমরা মাটি দিয়েই বানিয়ে দাও যেভাবে আগে ছিল। -(মুসলিম, হাদিস : ২৫৫০)
এনটি