মেকাপ নষ্ট হবে ভেবে অজুর বদলে তায়াম্মুম করা যাবে?
নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে, সুন্দর পরিপাটি রাখা ইসলামের শিক্ষা। পরিপাটি থাকা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। আল্লাহ তায়ালা নিজেও সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ (জামিল) সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। -(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১)
বর্তমানে মানুষের মাঝে শৌখিনতা বেড়েছে। প্রতি মুহুর্তে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মাঝে। সাজ-গোজের জন্য বাজারে বিক্রিত বিভিন্ন ধরণের মেকাপ- প্রসাধনী ব্যবহার করেন অনেকে। অনেকে এসব করেন নিজের সৌন্দর্যকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করতে। কেউ আবার এসব করেন নিজেকে পরিপাটি দেখাতে ও মন ফুরফুরে রাখতে।
বিজ্ঞাপন
সাজ-সজ্জা শরীয়ত সমর্থিত একটি বিষয়। সাজ-সজ্জা করলেও নামাজের মত মৌলিক ইবাদত ছাড়ার কোনও সুযোগ নেই। সময় মতো নামাজ ঠিকই পড়তে হয়। নামাজের জন্য অজু আবশ্যক। তবে মেকাপের পর অজু করলে মেকাপ নষ্ট হবে এমন ভাবনা থেকে কেউ তায়াম্মুম করতে চাইলে তার সুযোগ আছে কিনা অথবা এমন করাটা বৈধ হবে না- এমন প্রশ্ন করে থাকেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন,
বিশেষ অপারগতা থাকলেই তবে ইসলামে তায়াম্মুমের বিধান দেওয়া হয়েছে। তাই মেকাপ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে অজুর বদলে তায়াম্মুম করা যাবে না। তায়াম্মুমের বিধান স্বীকৃত হওয়ার কারণ হলো- মানুষ অপারগতার সময়ও যেন ইবাদত থেকে বঞ্চিত না হয়।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৪৩)
যেসব কারণে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে। তা জানা আবশ্যক। আলেমদের মতে তায়াম্মুম বৈধ হওয়ার অপারগ পরিস্থিতি হলো—
১. ব্যক্তি ও পানির মধ্যের দূরত্ব এক মাইল বা এর চেয়ে বেশি হওয়া। (দারাকুতনি : ৭৩১, ৭৩৪)
২. পানি ব্যবহারের কারণে রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা অথবা প্রাণ বা অঙ্গহানির আশঙ্কা হলে। (দারাকুতনি : ৭৩১; কিতাবুল আসার : ৭৪; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১১০৫)
৩. পানি এত কম যে ব্যবহার করে ফেললে নিজে অথবা অন্যরা পিপাসাকাতর হয়ে পড়বে। (সুনানে কুবরা : ১১৪৯)
৪. পাশেই কূপ বা পুকুর আছে, কিন্তু পানি এত নিচে যে তা থেকে পানি উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। (সহিহ বুখারি : ২/৬১)
৫. পানি কাছেই আছে, কিন্তু দুশমন অথবা ভয়ংকর কোনো পশু-প্রাণীর কারণে পানি অর্জন করতে অপারগ (সহিহ বুখারি : ২/৭২)
৬. প্রবল ধারণা যে অজু করতে গেলে ঈদ বা জানাজার নামাজ ছুটে যাবে, তখন তায়াম্মুম করা যাবে। কারণ সেগুলোর কাজা বা বিকল্প নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৩/৩০০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১১৫৮৬)
এনটি