প্রতীকী ছবি

অবিরাম পাপ করতে থাকলে মানুষের বিবেক বিকৃত হয়ে যায়। এর কারণে চিন্তা-ভাবনা ভুল পথে চলতে থাকে। ভালো কথাকে মন্দ বলে মনে হয়। আর মন্দ কথাকে ভালো মনে হয়। অনেকে পাপ করার পর নানারকম ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকে। যুক্তি দাঁড় করাতে চায় যে, এটা পাপ হবে কেন? এর মাধ্যমে এই উপকার হচ্ছে। 

ইবলিস আল্লাহর নির্দেশের সামনে যুক্তি পেশ করে বলেছিল, ‘আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন আর আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতএব, আমি আদম থেকে উত্তম। তাকে সেজদা করতে পারব না।’ (সুরা আরাফ :১২)

এজন্য কোনও পাপকে ছোট মনে করা যাবে না। এবং পাপ থেকে বেঁচে থাকার সবধরণের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মানুষ পাপের কারণে পরকালে তো অবশ্যই শাস্তি পাবে। তবে শুধু পরকালে নয় দুনিয়াতেও মানুষ কিছু কিছু পাপের শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তাদের গুরু শাস্তির পূর্বে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।’ -(সুরা সিজদা :২১)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদল চাপিয়ে দেন।’ (মুয়াত্তা মালেক : ১৩২৩)। 

হাদিস থেকে বুঝে আসে এসব বিষয়ের শাস্তির অংশ মানুষ পার্থিব জীবনেও ভোগ করবে। আর শাস্তি ধরন নানা রকম হয়ে থাকে। কারও অসুস্থতার মাধ্যমে, কাউকে অসহায়ত্বের মাধ্যমে, কারও আবার ঈমান হরণের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।

ব্যভিচারের শাস্তি

ব্যভিচারের শাস্তি ভয়াবহ। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মানুষ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার ওপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তাওবা করে, তখন ঈমান আবার তার কাছে ফিরে আসে।’ (আবু দাউদ : ৪৬৯০)। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২)

হাদিসের বর্ণনায়, ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে এমন সব দুরারোগ্য ব্যাধির সংক্রমণ হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ ইবনে মাজাহ।

তাফসিরে রুহুল আমানিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘বিপর্যয়’ বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অগ্নিকাণ্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়া, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম হওয়া ইত্যাদি আপদ-বিপদ বোঝানো হয়েছে।

ওজনে কম দেওয়ার শাস্তি

পরিমাপে ও ওজনে কম দেওয়া নিষেধ। এটি জঘন্যতম খেয়ানত ও কবিরা গুনাহ। এর ফলে আল্লাহ মানুষের ক্ষেতখামারে ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেন ও দুর্ভিক্ষ অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়, যারা মানুষের কাছ থেকে ওজন করে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন মানুষকে মেপে কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১-৩)

মা-বাবার অবাধ্যতার শাস্তি

সন্তানের জন্য দুনিয়াতে জান্নাত এবং জাহান্নাম হচ্ছেন মা-বাবা। যে ব্যক্তি মা-বাবার হক আদায় করতে পারবে সে দুনিয়াতেই পাবে জান্নাতের সুঘ্রান। আর যে ব্যক্তি মা-বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, দুনিয়ায়ই তার জন্য জাহান্নাম। মৃত্যুর আগে অবশ্যই সে ব্যক্তি মা-বাবার অবাধ্যতার শাস্তি ভোগ করবে। 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন ব্যক্তি ইয়া রাসুলুল্লাহ? উত্তরে নবীজি বললেন, যে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে পেল অথবা তাদের একজনকে পেল কিন্তু তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (মুসলিম : ২/৩১৪)

কারও প্রতি অন্যায় ও জুলুম 

এই পাপের জন্য পরকালে তো আজাব রয়েছেই, দুনিয়াতেও রয়েছে কঠিন পরিণাম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় কর। কেননা তার ফরিয়াদের মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ২২৮৬)। 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রতি মানসম্মান বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুম করে, তবে সে যেন তার কাছ থেকে সেদিন আসার আগে আজই মাফ করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে দেরহাম ও দিনার কিছুই থাকবে না। সেদিন তার কাছে যদি কোনো আমল থাকে, তবে তার জুলুম পরিমাণ নেকি নিয়ে নেওয়া হবে। আর তার কাছে নেকিও না থাকলে মজলুম ব্যক্তির গুনাহগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (মেশকাত : ৪৮৯৯)। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আদ ও সামুদকে ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের বাড়িঘরই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ। শয়তান তাদের কাজকে তাদের সামনে আকর্ষণীয় করে রেখেছিল। অথচ তারা নিদারুণ বিচক্ষণ ছিল। কারুন, ফেরাউন এবং হামানকেও (ধ্বংস করেছি)।’ -(সুরা আনকাবুত : ৩৮-৩৯)

এনটি