প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি জীবের মৃত্যু নির্ধারিত। কেউ চাইলে এর এক মুর্হুত আগে অথবা পরে মারা যাবে না। মৃত্যুর বিষয়টি পুরোপুরি আল্লাহ তায়ালার অধীনে, এতে কারো কোনও ইচ্ছেধিকার নেই। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না, এমনকি মুহূর্তকাল ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। -(সূরা নাহল, আয়াত, ৬১)

মৃত্যুর নির্ধারিত সময় এলে পৃথিবীর কোনও ক্ষমতাধর চাইলেও এ থেকে পালাতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ -(সুরা নিসা, আয়াত, ৭৮)

আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ -(লোকমান ৩১/ আয়াত, ৩৪)

কোনও মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার অবশ্যক হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দ্রুতই এই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)

কারও মৃত্যু ও দাফন-কাফন সম্পন্ন করার পর তার কবর জিয়ারত কথাও সুন্নত। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ... এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ -(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)

মানুষ যখন মৃত স্বজন বা অন্য কারও কবর জিয়ারত করে এ সময় কবরে শুয়ে থাকা মৃত স্বজনরা জীবিতদের জিয়ারত ও সালাম সালাম সম্পর্কে অবহিত হয়—এ বিষয়ে একাধিক হাদিসে ইঙ্গিত আছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়ায় পরিচিত তার কোনো মৃত ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দেয় তখন তার সালামের জবাব দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রুহকে ফেরত দেন। ’ (আল-ইসতিজকার : ১/১৮৫) এ কথা দ্বারা প্রমাণিত যে মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারেন এবং তার সালামের জবাব দেন।

রাসুল (সা.) কবরবাসীদের জীবিতদের মতো সম্বোধন করে সালাম দিতে বলেছেন।

মুতাওয়াতির (নিরবচ্ছিন্ন) সূত্রে পূর্বসূরি মুসলিম মনীষীদের থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত আছে যে মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির জিয়ারত (সাক্ষাৎ) বুঝতে পারে এবং এতে সে খুশি হয়। এছাড়াও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে মৃত ব্যক্তির জানাজার পর তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করা সে পছন্দ করে ও ভালোবাসে। (মুসলিম, হাদিস : ১২১)


কবর জিয়ারতের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন—

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার।

অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন—

السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন।

অর্থ : মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)

এনটি