প্রতীকী ছবি

মানুষের সঙ্গে শয়তানের শত্রুতা সেই আদিকালের। সূচনাকাল থেকেই শয়তান মানুষকে বিপথগামী করার কাজে লিপ্ত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ...সে (শয়তান) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’লে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার সম্মানের শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে একনিষ্ঠ বান্দাদের নয়। তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য আর আমি সত্যই বলি। তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।’ -( সুরা, সোয়াদ, আয়াত, ৭৮-৮০)

শয়তান মানুষকে যেসব পথ-পন্থা অবলম্বন করে আল্লাহ বিমুখ করতে চায় তার একটি দারিদ্র্যের ভয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং জঘন্য কাজে উৎসাহ দেয়, পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদের তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ বিপুলদাতা, সর্বজ্ঞ’। (সুরা বাকারা : ২৬৮)

দুনিয়ার প্রীতি এবং সম্পদের মোহ মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যাধিক ভালোবেসে থাক’। (সুরা ফজর : ২০) শয়তান মানুষের স্বভাবজাত এ বিষয়টিকে টার্গেট করে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে, ‘তুমি যদি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, তোমার আশপাশের পীড়িত মানুষদের সাহায্য কর তাহলে তুমি নিজেই নিঃস্ব-ফকির হয়ে পড়বে। তখন তোমার নিজের কী করুণ দশা হবে’?

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং জঘন্য কাজে উৎসাহ দেয়, পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদের তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ বিপুলদাতা, সর্বজ্ঞ’। (সুরা বাকারা : ২৬৮)

 

বিখ্যাত বুজুর্গ, আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি হজরত সুফয়ান সাওরী (রহ.) বলেছেন, ‘শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো মানুষকে ভয় দেখানো’। অনেক মানুষ শয়তানের পাতা এ ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। তখন আল্লাহ তায়ালার প্রতি তার মন্দ ধারণা তৈরি হয়। কৃপণতা করে, অন্যের হক আদায় করে না। জুলুম করে, অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করে। ভবিষ্যত সম্পর্কে অহেতুক প্রশ্ন ও দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়। এভাবেই পথ খুলে হাজারো রকমের নৈরাজ্যের।

মহান আল্লাহ শয়তানের এ ধরনের কার্যকলাপ সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছেন। এবং তিনি মুমিনদের রিজিকের বিষয়ে নিশ্চয়তা দান করেছেন। বর্ণিত হয়েছে,  ‘আর জমিনে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই।’ (সুরা হুদ: ৬)

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার পবিরার-পরিজনকে নামাজের নির্দেশ দাও আর তাতে অবিচল থাক। তোমার কাছে আমি রিজিক চাই না, আমিই তো তোমাকে রিজিক দিয়ে থাকি, উত্তম পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য নির্দিষ্ট। (সুরা তহা: ১৩৩)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো রিজিক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো রিজিকদাতা, প্রবল শক্তিধর, মহা-পরাক্রমশালী’। (সুরা জারিয়াত: ৫৬-৫৮)

দারিদ্র্যের আশঙ্কায় মানুষ অনেক সময় বিপথগামী হয়, অসৎপথে জীবিকা নির্বাহ করে, অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উম্মতের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করতেন না, বরং প্রাচুর্যের কারণে আল্লাহ বিমুখ হয়ে যাবে এমন ভয় করতেন।

বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং তোমাদের আনন্দদায়ক বিষয়ের আশায় থাকো, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের আশঙ্কা করি না; বরং আমি আশঙ্কা করি যে, তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য এসে যাবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা তা লাভ করতে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করবে যেমনভাবে তারা করেছিল। আর এ ধন-সম্পদ তাদের যেমনিভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরও তেমনিভাবে ধ্বংস করে দেবে। (সহিহ বুখারি: ৩৭২৪)

এনটি