প্রতীকী ছবি

ইসলামে যেসব ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার একটি জামাতে নামাজ আদায়। আল্লাহ তায়ালা নিজেই জামাতে নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ (সূরা : বাকারা : ৪৩)। অর্থাৎ জামাতে নামাজ আদায়কারীদের সাথে নামাজ আদায় করো।

পুরুষের জন্য জামাতে নামাজ

পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের সাথে তুলনীয় (অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি) (মুসলিম, হাদিস : ১০৯৩)।

শরিয়ত অনুমোদিত কোনো অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গুনাহগার (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৪)।

কোনও কারণ ছাড়া জামাত পরিত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এমন লোকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।

হাদিসে জামাতের গুরুত্ব

হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, ‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৮)।

জামাতে নামাজ আদায় একা নামাজ থেকে উত্তম উল্লেখ করে আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি’ (মুসলিম-১৪৭৭)। 

আরেক হাদিসে নবীজী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেয়া হয়। একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় (মুসলিম-১০৯৩)।

এক মসজিদে একাধিক জামাত

জামাতে নামাজের জন্য সবাই মসজিদেই উপস্থিত হন। মসজিদে জামাতে নামাজের জন্য আজান ও ইকামত দেওয়া। প্রায় সব মসজিদেই প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য একটি জামাতই অনুষ্ঠিত হয়।

ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা, এক মসজিদে এক ওয়াক্তের জন্য একাধিক জামাতকে নিরুৎসাহিত করেন এবং একে মাকরুহ বলে থাকেন। কারণ এতে করে মসজিদের জামাতে মুসল্লি কমে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে এবং জামাতের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। তাই আলেমরা বলেন, সবার উচিত জামাতের সাথে নামাজ পড়া। 

একাধিক জামাতে কি আলাদা আলাদা ইকামত?

তবে কেউ যদি একান্ত কোনও কারণে মসজিদের নির্ধারিত জামাতে শরিক হতে না পারে তাহলে পরে জামাত করার জন্য আলাদা ইকামত দিতে হবে না।

এ বিষয়ে আলেমদের মতামত হলো, যেসব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন নির্ধারিত নেই। সেখানে প্রতিটি জামাতের মধ্যেই ইকামত দেবে। আর যেসব মসজিদের নির্ধারিত ইমাম-মুয়াজ্জিন আছে, সেখানে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরুহ। তবুও কেউ যদি দ্বিতীয় জামাত করে, তখন ইকামত দেবে না।-(আপকে মাসায়েল আউর উনকা হল : ৩/৩১৪, আহসানুল ফাতাওয়া : ১০/২৯৩)

আলেমদের মতে, কেউ একান্ত মসজিদের নির্ধারিত জামাতে অংশ নিতে না পারলে পরে জামাত না করে একাকী নামাজ আদায় করে নেওয়া উচিত। আর জামাত করে নামাজ আদায় করতে চাইলে নিজের বাসায় অথবা মসজিদ সংলগ্ন কোনো স্থান, কোনও রুম বা মাদরাসায় জামাত আদায় করা উচিত। 

যেমন হাদীসে এসেছে, হজরত আবু বকরা (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক এলাকা থেকে নামাজের উদ্দেশ্যে আগমন করলেন। এসে দেখলেন লোকেরা (সাহাবায়ে কেরাম)নামাজ পড়ে নিয়েছে। তখন তিনি ঘরে গিয়ে জামাতের সাথে নামাজ পড়লেন।’ -(আল মু’জামুল আওসাত তাবারানী, হাদিস, ৪৬০১)

এনটি