প্রতীকী ছবি

ভ্রমণ মানুষের জীবনে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, বিশেষ কাজ বা শখের বসে মানুষ সফরে বের হয়। বর্তমান সময়ে এসে শখ-আহ্লাদের বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে পেয়ে বসেছে সবাইকে। শীত, গ্রীষ্ম, শরৎ বিভিন্ন মৌসুম ঘিরে এখন ভ্রমণ পিপাসুদের মাঝে সাড়া পড়ে। দেশ-বিদেশের নয়ানাভিরাম সব স্পট নির্বাচিত করে ঘুরতে বের হন লোকজন।

মানুষের স্বভাবের সঙ্গে মিশে থাকা ভ্রমণের সুপ্তবাসনা শুধু এ যুগেই নয়, প্রাচীনকালের মানুষের মাঝেও ছিল, সব যুগে, সব সময় ঘুরে ঘুরে বিশ্ব দেখার এ ইচ্ছে বলা যায় আদিপুরুষ থেকেই পেয়েছে মানুষ। বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছেন, ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য জানায়, ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রত্যেক মানুষেরই সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূরে ভ্রমণের মাধ্যমে স্রষ্টার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে বিকশিত করা উচিত।

পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ভ্রমণকে তিনি মানুষের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে গ্রহণের কথা বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, তোমাদের আগের লোকদের কী পরিণাম হয়েছিল! তাদের বেশির ভাগই ছিল মুশরিক।’ -(সুরা : রুম, আয়াত : ৪২)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে, তাদের পরিণাম কী হয়েছিল?’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১১)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে কি তারা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে না, যাতে তাদের অন্তর অনুধাবন করতে পারত এবং তাদের কান (সত্য কথা) শুনে নিত।’ -(সুরা : হজ, আয়াত : ৪৬)

ভ্রমণ আনন্দ, উচ্ছাস প্রকাশের একটি উপলক্ষ। তবে অনেক সময় ভ্রমণ বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অসতর্কতা ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে। কখনো কখনো মন্দ লোকের খপ্পরে পড়েও প্রমোদ ভ্রমণ বিস্বাদে পরিণত হয়। তাই ভ্রমণে নিরাপদ থাকতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল ভ্রমণে বের হয়ে বাহনে চড়ার পর একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো-


بسم الله الرحمن الرحيم سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ

উচ্চারণ :  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হা-যা ওয়া-মা-কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন কালিবুন।’

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও অশেষ করুণাময়। তিনি পূতপবিত্র ওই সত্তা যিনি বাহনকে আমার অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে তাকে আয়ত্তে আনার ক্ষমতা ছিল না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। 

ভ্রমণ থেকেও ফিরেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করতেন। তাকে স্মরণ করতেন দোয়ার মাধ্যমে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সফর থেকে পরিবারের কাছে ফিরতেন, তখন একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো-

আরবি :

آيِبُونَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ

উচ্চারণ : ‘আয়িবুনা ইনশাআল্লাহু তায়িবুনা আবিদুনা লি-রাব্বিনা হামিদুন। ’

অর্থ : আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী নিজ রবের প্রশংসাকারী। -(তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৭, বুখারি, উমরাহ, হাদিস, ১৭৯৭; মুসলিম, হজ, হাদিস, ১৩৪৪)

এনটি