ধূমপান, তামাক, জর্দা খেয়ে নামাজ পড়া যাবে?
আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাস স্থাপনের পর একজন মুসলমানের পরবর্তী প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ -(সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
নামাজ আদায় না করলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ -(সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৩)
বিজ্ঞাপন
নামাজের জন্য পবিত্রতা
নামাজ শুরুর আগে নিজেকে পূতঃপবিত্র করে নিতে হয়। অপবিত্রতা সঙ্গে নিয়ে নামাজ হয় না। নামাজের বাহির ও ভেতরের ফরজের মধ্যে একটি হলো পবিত্রতা।
ধূমপান করে নামাজ আদায়
অনেক সময় মানুষ শারিরীকি পবিত্রতা অর্জন করলেও কিছূ কিছু এমন কাজ করে যা খালি চোখে দোষণীয় মনে হয়। অনেকের মনে প্রশ্নও জাগে যে এসবের কারণে অজু ভেঙে যায় কিনা অথবা এমন কাজ করার পরে নামাজ হবে কিনা?- এমন একটা কাজ হলো, ধূমপান, জর্দা ও তামাক খাওয়া।
আলেমদের মতামত
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন, ধূমপান করা ঠিক না। এতে আর্থিক অপচয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত ক্ষতিও রয়েছে। ধূমপানের মাধ্যমে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমরা) নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
ধূমপানে দুর্গন্ধ
জেনেশুনে নিজের জানমালের ক্ষতি করা গুনাহ। আলেমরা ধূমপানকে মাকরুহ বলে থাকেন। এ জন্য এ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। আরেকটি বিষয় হলো, ধূমপায়ীর মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় এতে অন্যের কষ্ট হয়, যা পৃথক একটি গুনাহ। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ নয়
আলেমদের মতে, দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায় নামাজে দাঁড়ানো মাকরুহ তাহরিমি। বরং এ অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করাও মাকরুহ। হাদিস শরিফে ধূমপানের চেয়ে অনেক কম দুর্গন্ধ বস্তু কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন এবং পেঁয়াজের মতো গন্ধ হয় এমন কোনো সবজি আহার করবে, সে যেন মসজিদের কাছাকাছিও না আসে, কেননা; মানুষ যে খারাপ গন্ধ দ্বারা কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও অনুরূপ কষ্ট পেয়ে থাকেন।’ -(মুসলিম : ১/৩৯৫)।
অতএব বিড়ি-সিগারেটের তীব্র দুর্গন্ধের সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করা যে নিষিদ্ধ হবে তা তো সহজেই অনুমেয়। অবশ্য এ কারণে নামাজ ত্যাগ করা যাবে না এবং মসজিদে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না। বরং অতিদ্রুত এ বদঅভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে।
মিসওয়াক বা ব্রাশ করা
আর নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ভালো করে মিসওয়াক বা ব্রাশ করে দুর্গন্ধ দূর করে নিতে হবে। তবে কেউ যদি একান্ত ধূমপানের দুর্গন্ধ নিয়ে নামাজ পড়ে নেয় তাহলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
তামাক, জর্দা খেয়ে নামাজ
ধূমপানের বাইরে পানের সঙ্গে জর্দা বা তামাক খাওয়া চিকিৎসকদের মতে শারীরিক ক্ষতির কারণ। তাই যথাসম্ভব এ থেকেও বিরত থাকা উচিত। আর কারও ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর প্রমাণ হলে তার জন্য তা খাওয়া নাজায়েজ।
আলেমরা বলেন, যারা পান-জর্দা খায় তাদের জন্যও নামাজ আদায়ের আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া কর্তব্য। যেন পানের কণাগুলো বের হয়ে যায় এবং গন্ধও না থাকে। এসবের দুগন্ধ থেকে দূরে থাকতে অনেক মিসওয়াক করা পরামর্শ দেন। মিসওয়াক ইসলামের দায়েমি একটি সুন্নত। এ সুন্নতটির প্রতি যত্নবান হয়ে দাঁত এবং মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। -(আলফাতাওয়াশ শারইয়্যাহ : ১০/১৪৫; রদ্দুল মুহতার : ১/৬৬১)
এনটি