জুমার দিনে কেমন হবে জান্নাতের বাজার?
মানুষ বাজারে যায়। সদাই ও কেনাকাটা করে। নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনে। বাজারের চাহিদা মানুষের সব সময়ের। পৃথিবীতে বাজারের বিভিন্ন ধরন ও রকমারিত্ব রয়েছে। কিন্তু জান্নাতের বাজার হবে কেবল এক ধরনের। সেখানকার নিয়ম-রীতি ও বাজার-সংস্কৃতি হবে— পৃথিবীর বাজারগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। থাকবে না কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। কোনো কিছুই বেচাকেনা হবে না সেখানে।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে। সেখানে নারী-পুরুষের প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছুর ক্রয়-বিক্রয় হবে না। কোনো ব্যক্তি যখনই যেকোনো ধরনের মুখাবয়ব ধারণ করতে চাইবে, সঙ্গে সঙ্গে সে সেই আকৃতি ধারণ করতে পারবে। (মিশকাত, হাদিস : ৫৬৪৬; তিরমিজি, হাদিস : ২৫৫০)
বিজ্ঞাপন
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে—
জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমার দিন জান্নাতি লোকজন সেখানে একত্রিত হবেন। এরপর উত্তর দিকের মৃদু বায়ু প্রবাহিত হয়ে— সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাকপরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। শরীরের রং আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এরপর তারা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে। এসে দেখবে, পরিবারের লোকদের শরীরের রং ও সৌন্দর্যও বহুগুণ বেড়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা তাদের বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের সৌন্দর্যও আমরা তোমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে।
(মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৩-১৮৮৯)
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি একদিন আবু হুরাইরা (রা.)-এর সঙ্গে দেখা করলে তিনি বললেন, আমি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি— তিনি যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্র করেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) প্রশ্ন করেন, জান্নাতে কি বাজারও থাকবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতিরা জান্নাতে গিয়ে নিজ নিজ আমলের পরিমাণ ও মর্যাদা অনুযায়ী সেখানে জায়গা (মর্যাদা) পাবে। তারপর দুনিয়ার সময় অনুসারে জুমার দিন তাদের (তাদের প্রতিপালকের দর্শনের) অনুমতি দেওয়া হবে। তখন তারা তাদের রবকে দেখতে আসবে। তাদের জন্য তার আরশ প্রকাশিত হবে। জান্নাতের কোনো এক বাগানে তাদের সামনে তাদের প্রভুর প্রকাশ ঘটবে। তাদের জন্য নুর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগ মণি, জমরুদ ও সোনা-রুপা ইত্যাদির মিম্বর রাখা হবে। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতিও মিশক ও কর্পূরের স্তূপের ওপর আসন গ্রহণ করবে। তবে সেখানে কেউ হীন-নিচ হবে না। মিম্বরে আসীন ব্যক্তিদের তারা তাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ বা উৎকৃষ্ট ভাববে না।
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম—
হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোনো সন্দেহ হয়?’ আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, ‘ঠিক সে রকম তোমাদের রবের দেখাতেও কোনো সন্দেহ থাকবে না। আর সে মাজলিসের প্রত্যেক লোক আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথা বলবে। এমনকি তিনি একে একে তাদের নাম ধরে ডেকে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! অমুক দিন তুমি এমন কথা বলেছিলে, তোমার কি মনে আছে? এভাবে তিনি তাকে দুনিয়ার কিছু নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘনের কথা মনে করিয়ে দেবেন। লোকটি তখন বলবে, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেননি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি এ জায়গাতে পৌঁছেছ।
এই অবস্থায় হঠাৎ এক খণ্ড মেঘ এসে তাদের ওপর ছায়া ফেলবে এবং তা থেকে তাদের ওপর সুগন্ধি (বৃষ্টি) বর্ষিত হবে, যে রূপ-সুরভি তারা আগে কখনো কোনো কিছুতে পায়নি। আমাদের রব বলবেন, ওঠো! আমি তোমাদের সম্মানে যে মেহমানদারি প্রস্তুত করেছি সেদিকে অগ্রসর হও এবং যা কিছু পছন্দ হয় তা গ্রহণ করো। তখন আমরা একটি বাজারে এসে উপস্থিত হব, যা ফেরেশতারা ঘিরে রাখবেন।
সেখানে এরূপ পণ্যসামগ্রী থাকবে, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কখনো কোনো অন্তরে সেটার কল্পনাও উদিত হয়নি। আমরা সেখানে যা চাইব, তাই দেওয়া হবে। তবে বেচা-কেনা হবে না। আর সে বাজারেই জান্নাতিরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করবে। জান্নাতি নিজের পোশাক দেখে আত্মহারা হয়ে যাবেন। কথা শেষ হতে না হতেই তিনি দেখতে থাকবেন যে, তার গায়ে আগের চাইতে উত্তম পোশাক দেখা যাচ্ছে।
আর এরূপ এ জন্যই হবে যে, সেখানে কারও দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করবে না। তারপর আমরা নিজেদের স্থানে ফিরে আসব এবং নিজ নিজ স্ত্রীদের দেখা পাব। তারা তখন বলবে, অভিনন্দন ও স্বাগতম! কী ব্যাপার! যে রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে তোমরা গিয়েছিলে, তার চাইতে উত্তম সৌন্দর্য নিয়ে ফিরে এসেছো। আমরা বলব, আজ আমরা আমাদের আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মজলিসে বসেছিলাম। কাজেই এ পরিবর্তন হয়েছে। আর এটাই ছিল স্বাভাবিক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৪৯)