যেসব জায়গায় প্রস্রাব করা নিষেধ
প্রস্রাব-পায়খানা মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। কেউ এর থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। স্বভাবগত এই প্রয়োজন দেখা দিলে মানুষ তাৎক্ষণিক এ থেকে মু্ক্ত হয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি বিষয় বিশদভাবে শিক্ষা দিয়েছে। এর ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন আদেশ নিষেধ দিয়েছে। সব কিছুর মতো একান্ত প্রাকৃতিক বিষয় প্রস্রাব-পায়খানা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে ইস্তেঞ্জা নিয়ে বিশদ বর্ণনা ও আলাদা আলাদা অধ্যায় রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাসুলের শিক্ষা
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে বারণ করতেন। -(আবু দাউদ, হাদিস : ০৭)
লোকচক্ষুর আড়ালে
স্বভাবগতভাবে মানুষ প্রস্রাব-পায়খানা করার জন্য গোপন ও আড়াল জায়গা বেছে নেয়। হাদিসেও এমন জায়গার কথা বলা হয়েছে, হজরত আবু মূসা (রা.)- এর সূত্রে বর্ণিত, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পেশাব করার ইচ্ছা করলেন। অতঃপর তিনি একটি দেয়ালের গোড়ার নরম মাটিতে গিয়ে পেশাব করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ পেশাব করতে চাইলে যেন নীচু নরম জায়গা অনুসন্ধান করে নেয়। -(আল-জামি’উস সাগীর ৩১৯, মিশকাত ৩৪৫)
মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার একটি দিক হলো যত্রতত্র প্রস্রাব-পায়খানা না করা। হাদিসে কিছূ জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যেখানে ইস্তেঞ্জা করা নিষেধ এবং ফেকাহবিদেরা এসব জায়গায় ইস্তেঞ্জা করাকে মাকরুহ বলেছেন। এমন কয়েকটি স্থান হলো-
গর্তে প্রস্রাব করা মাকরুহ
’আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন গর্তে প্রস্রাব না করে। লোকেরা কতাদাহ্-কে প্রশ্ন করলো, গর্তে প্রস্রাব করা নিষেধ কেন? তিনি জবাব দেন যে, বলা হয়ে থাকে, গর্তসমূহ জিনের বাসস্থান। -(আবূ দাউদ ২৯, মুসনাদে আহমাদ ২০৭৯৪)
বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করা
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমা পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। -(মুসলিম ৫৪৬)
আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন জমা পানিতে প্রস্রাব করে তা দিয়ে যেন গোসল না করে। -(মুসলিম ২৮১, ইবনু মাজাহ ৩৪৩, ৩৪৪)
গোসলখানায় প্রস্রাব করা
’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রা.)-এর সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত। নবীজি (সা.) বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় প্রস্রাব না করে। কেননা, তা থেকেই যাবতীয় সন্দেহের উদ্রেক হয়। (আবূ দাউদ ২৭, তিরমিযী ২১, ইবনু মাজাহ ৩০৪)
প্রবল বাতাসের দিকে ফিরে প্রস্রাব করা
প্রবল বাতাসের দিকে ফিরে প্রস্রাব করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে, সে জন্য একটা উপযোগী স্থান খুঁজে নেবে। যেমন- পর্দার দিকে লক্ষ্য রাখবে আর বাতাসের দিকে মুখ করে বসবে না।‘ (আবু দাউদ)
মানুষের বিশ্রামের জায়গায়
যেখানে মানুষ বসে বিশ্রাম করে কিংবা পুকুর, ঝরনা, হাউস প্রভৃতি স্থানে প্রস্রাব করা নিষেধ। কারণ, এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। অনুরূপভাবে যেখানে মানুষ বসে গল্প-সল্প করে সেসব স্থানেও প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ। -(ফাতহুল আযিয শরহে মুহাযাব : ১/৪৬১)
বিশেষ তিনটি স্থানে
মুয়ায রা. বলেন, নবীজি বলেছেন, ‘অভিশাপের কারণ হয় এমন তিনটি স্থানে পেশাব-পায়খানা করা হতে তোমরা বেঁচে থাকবে— (১) পানির ঘাট, (২) চলাচলের পথ ও (৩) ছায়াযুক্ত স্থান।’ -(আবু দাঊদ, ২৬, মিশকাত, ৩৫৫)
এনটি