সেন্ট পিটার্সবার্গ নীল মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্য
রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী সেন্ট পিটার্সবার্গ। এটি ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন শহর। রাশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিত। রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী লেলিনগ্রাদই আজকের সেন্ট পিটার্সবার্গ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই শহর যেকোনো পর্যটকের প্রথম পছন্দ।
রাজধানী মস্কো থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে সেন্ট পিটার্সবার্গ। বাল্টিক সাগরের অন্তর্গত ফিনল্যান্ড উপসাগরের মোহনায় নেভা নদীর তীরে অবস্থিত সাজানো-গোছানো এই শহর। শহরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত সেন্ট পিটার্সবার্গ মসজিদ— যেটি ‘নীল মসজিদ’ নামে সমধিক পরিচিত।
বিজ্ঞাপন
রুশ সাম্রাজ্যের রাণী ক্যাথেরিনের শাসনকালে সেন্ট পিটার্সবার্গের মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলতে পারত। কারণ, তারাই ছিল ওসমানি খিলাফত ও বুখারা সমরকন্দের সঙ্গে রাশিয়ায় যোগাযোগের বিশ্বস্ত মাধ্যম। এতদসত্ত্বেও তখন তাদের জন্য মসজিদ নির্মাণের অনুমতি ছিল না। প্রত্যেকে নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করত।
১৮৮১ সালে বুখারার আমির পুত্র পিটার্সবার্গ সফরকালে মসজিদ নির্মাণের জন্য অনুমতি চান। কিন্তু তৎকালীন সরকার সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দেয়। ১৯০৪ সালে মসজিদ নির্মাণের আবেদনে সম্মতি জানিয়ে বুখারার আমিরকে চিঠি প্রেরণ করে সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাস। তখন তিনি মসজিদের জন্য জায়গা কেনেন। তবে পুনরায় বাধা দেওয়ায় নির্মাণকাজ স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে নির্মাণের অনুমতি পেয়ে ১৯১০ সালে শুরু হয়ে তিন বছরের মাথায় শেষ হয়।
বুখারা ও সমরকন্দের মসজিদগুলোর আদলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালের ভেতরে ও বাহিরে নীল মোজাইক দিয়ে সাজ্জিত করা হয়। এতে এক অতুলনীয় শৈল্পিক সৌন্দর্য নান্দনিক আবহ সৃষ্টি হয়। মিনার দুইটিতেও নীল আকাশের মতো হালকা নীল মোজাইক করা হয়।
মসজিদের দেয়ালে ও বিভিন্ন জায়গায় নান্দনিক কোরআনিক ক্যালিগ্রাফি মসজিদের শোভা বর্ধন করেছে। ১৯১৩ সালে বুখারার আমির মীর মুহাম্মদ আমির আলী খানের উপস্থিতিতে এই মসজিদ উদ্বোধন হয়। সেই সময় এটি ছিল তুরস্কের বাইরে ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ।
১৯২৪ সালে কমিউনিস্ট সরকার মসজিদের বিশাল অংশকে খাদ্য গুদাম হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। শুধু স্বল্প পরিসরে নামাজ আদায়ের অনুমতি থাকে মুসলমানদের। এরপর ১৯৪০ সালে সব ধরনের ইবাদত বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর এটিকে সামরিক ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার শুরু করে কমিউনিস্ট সরকার।
ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আহমদ সূকার্ণো রাষ্ট্রীয় সফরে সেন্ট পিটার্সবাগে পৌঁছে রুশ সরকারের কাছে এই মসজিদটি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। প্রথমে প্রত্যাখ্যান করলেও অনুরোধের দশ দিনের মাথায় ১৯৫৬ সালে মসজিদটি ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং পরিচালনার দায়িত্ব মুসলমানদের হাতে দেওয়া হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই মসজিদে ইবাদত ও দাওয়াতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনতলা বিশিষ্ট এই মসজিদে একসঙ্গে ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। দ্বিতীয়তলায় নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। তৃতীয়তলায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিদিন রুশ ও তাতারি ভাষায় ইসলামবিষয়ক আলোচনা হয়। পাশাপাশি আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স ও বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের কোর্সও পরিচালিত হয়।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, কক্সবাজার।