প্রতীকী ছবি

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে প্রায়ই পড়তে হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতির নিজস্ব কোনো সৃষ্টি নয়। বরং জল-স্থল, চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে যা কিছু ঘটে, সেগুলো মহান আল্লাহর সূক্ষ্ম পরিকল্পনারই অংশ। দুর্যোগ-দুর্ঘটনাও তার ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষের কৃতকর্ম।

সমাজে অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে দুর্যোগ শুধু পাপের কারণেই হয়- তা নয়; এর মাধ্যমে কখনও কখনও মানুষকে পরীক্ষাও করা হয়। তাই যেকোনো দুর্যোগে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। 

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)

বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো মানুষের অবশ্য কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; তারাই সফলকাম। মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮-৩৯)।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাবার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সূরা দাহর : আয়াত ৮-৯)

হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’-(বোখারি, হাদিস : ১৭৩২)

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও  বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ -(মুসলিম, হাদিস : ২৩১৪)

অসহায় ও দুযোর্গ কবলিতদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নবীজি আরও বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ -(বোখারি, হাদিস : ২৪১৭)

আল্লাহর রাসুল আরেক হাদিসে বলেন,

‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দীন-দরিদ্রের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষের সঙ্গে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে এবং জাকাত দেবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৩)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ -(মুসলিম, হাদিস : ২৪১৯)

অসহায়দের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোকে ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা না করলে পরকালে শাস্তি পেতে হবে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কিসে তোমাদের দোজখে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে আমরা মুমিনদের দলভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না। -(সূরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৪২-৪৪)

হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখাশুনা করনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! কিভাবে আমি আপনাকে দেখাশুনা করব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? অথচ তুমি তাকে দেখাশুনা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখাশুনা করতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে? 

হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি আপনাকে কিভাবে খাওয়াব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাওয়াতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে? 

হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনাকে কিরূপে পানি পান করাবো, আপনি তো সকল সৃষ্টির রব?’ তিনি বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে?’  -(মুসলিম ২৫৬৯, ইবনু হিব্বান ৯৪৪, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫১৭, সহীহ আত্ তারগীব ৯৫২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৯১৬)

এনটি