নামাজের জন্য নারীদের কি আজান-ইকামত দিতে হয়?
নারী-পুরুষ, গরিব-ধনী নির্বিশেষে সকল মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ -(সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
নামাজ না পড়লে আখেরাতে কঠিন শাস্তি ও জাহান্নামের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। ’ (সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৩)
বিজ্ঞাপন
নামাজ না পড়লে পরকালীন শাস্তি ছাড়াও দুনিয়াতে এর বিভিন্ন বিরূপ প্রভাব পড়ে, ইহকালীন জীবনও বরকতশূন্য হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির আসরের নামাজ কাজা হয় তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল। -(মুসলিম, হাদিস : ১৩০৪)
নামাজের জন্য আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। এছাড়াও আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বহন করে। আজানের মাধ্যমেই মুসলমানরা বুঝতে পারেন যে নামাজের সময় হয়েছে। এজন্য ফরজ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আজান ও একামতের গুরুত্ব অপরিসীম।
নামাজের জন্য মহল্লার মসজিদে পুরুষ মুয়াজ্জিন আজান ও ইকামত দিয়ে থাকেন। তবে মহিলারা নিজ ঘরে নামাজ আদায়ের সময় তাদের জন্য আলাদা আজান-ইকামত দিতে হবে কিনা- এমন প্রশ্ন করেন অনেকে।
যেমন একজন জানতে চেয়েছেন- ‘মহিলারা ঘরে একা একা নামায পড়ার সময় ইকামত বলবে কি না?’
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন, মহিলাদের নামাজের জন্য আজান ও ইকামত নেই-তারা নিজেরা জামাতে নামাজ আদায় করুক অথবা একাকী করুক। তাদের আজান-ইকামত দেওয়া মাকরূহ। তারা আজান-ইকামত ছাড়া নামাজ আদায় করবে। এ ব্যাপারে জুমহুর বা অধিকাংশ আলেম একমত। কারণ এর পক্ষে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়।
যেমন, হজরত আয়েশা রা. বলেন,
كنا نصلي بغير إقامة
‘আমরা ইকামত ছাড়া নামাজ আদায় করতাম।’ - (সুনানে বায়হাকী ২/১১৭)
হজরত ইবনে উমর রা. থেকে এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন,
ليس على النساء أذان ولا إقامة
‘মহিলাদের জন্য আজান ও ইকামত নেই।’ (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী,ইবনে হাজার আসকালানী আত তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলেছেন ১/৫২১)
শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন,
لا يشرع للمرأة أن تؤذن أو تقيم في صلاتها إنما هذا من شأن الرجال، أما النساء فلا يشرع لهن أذان ولا إقامة بل يصلين بدون أذان ولا إقامة، وعليهن العناية بالوقت
‘মহিলাদের নামাজের জন্য আজান ও ইকামত কোনটাই শরিয়ত সম্মত নয়। এগুলো পুরুষদের কাজ। বরং তারা আজান ইকামত ছাড়াই নামাজ আদায় করবে। তারা নামাজের সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে।’ (বিন বায রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)
(সুনানে বায়হাকী ১/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৮; ফাতহুল কাদীর ১/২১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩; ফাতাওয়া শামী)
এনটি