প্রতীকী ছবি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা ইসলামী জীবনরীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ (জামিল) সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। -(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১)

ইসলাম নারীদের স্বামীর জন্য সর্বোত্তম সাজসজ্জা করার নির্দেশ দেয়। স্বামীর উদ্দেশে সাজসজ্জা করা ইবাদত হিসেবেও গণ্য করা হয়। -(আলমুফাস্সাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৪৮)

বৈধ উপায়ে যেকোনও ধরনের সাজ-সজ্জার অনুমতি রয়েছে ইসলামে। বর্তমানে অনেক নারী সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মেকাপসহ বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করেন। সাজ-সজ্জা করলেও নামাজের মতো ইবাদত সব সময়ই পালন করতে হয়। 

মেকাপ করার পর এর ওপর অজু করলে অজু হবে কিনা এবং এতে নামাজ আদায় বিশুদ্ধ হবে কিনা- এনিয়ে সন্দেহে পড়ে যান অনেক নারী। কারণ, বাজারে বিক্রিত মেকাপগুলোর কোনও কোনওটিতে এমন উপকরণ থাকে যার কারণে চামড়ায় ঠিক পানি পৌঁছায় না।

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো, মেকাপ যদি এতো হালকা হয় যে, ত্বকে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধক নয় তাহলে তার ওপর অজু করলে অজু হয়ে যাবে।

আর মেকাপ যদি এত ভারী হয় যে, তা ত্বকে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক তাহলে এমন মেকাপ করে অজু করলে অজু হবে না। কারণ অজুর অঙ্গগুলোতে পানি পৌঁছানো জরুরি। অঙ্গগুলোর কোনো একটি অংশ যদি শুকনো থাকে, তাহলে অজু হয় না। 

আলেমরা বলেন, অজুতে চেহারা, হাত, পা, মাথা এই চারটি অঙ্গ ভেজানো ফরজ। এই চার অঙ্গে মধ্যে মাথা মাসেহ করা ফরজ। আর বাকি তিন অঙ্গ ধোয়া ফরজ।

এ অঙ্গগুলোর কোনো একটি স্থান শুকনো থাকলে— অজু হবে না। অজুর শেষে যদি কোনো উপায়ে জানা যায়, এই তিন অঙ্গের কোথাও শুকনো রয়ে গেছে। তাহলে শুধু শুকনো জায়গা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই হবে; নতুন অজু করতে হবে না। -(আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩১৬)

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: رَجَعْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِمَاءٍ بِالطَّرِيقِ تَعَجَّلَ قَوْمٌ عِنْدَ الْعَصْرِ، فَتَوَضَّئُوا وَهُمْ عِجَالٌ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ وَأَعْقَابُهُمْ تَلُوحُ لَمْ يَمَسَّهَا الْمَاءُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ

‘আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে মক্কা থেকে মদীনায় ফিরে আসছিলাম। পথিমধ্যে আমরা যখন এক জায়গায় পানির কাছে পৌছলাম, তখন কিছু সংখ্যক লোক আসরের নামাজের সময় তাড়াহুড়া করল। এরা অজুও করল তাড়াহুড়া করে। আমরা যখন তাদের কাছে পৌঁছলাম, তখন তাদের পায়ের গোড়ালিসমূহ এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌঁছেনি। এ দেখে রাসূল (সা.) বললেন, অজু করার সময় পায়ের গোড়ালির যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি সেগুলোর জন্য জাহান্নাম। তাই তোমরা ভালভাবে অজু করো।’ -(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪১)

হাদিস ও মাসআলার প্রেক্ষিতে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, মেকাপ যদি এত ভারী হয় যে, তা ত্বকে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক তাহলে সেই মেকাপ উঠিয়ে তারপর অজু করতে হবে।

এনটি