মরদেহ বহনের সময় উচ্চস্বরে কালিমা পড়া যাবে?
মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, মুমুর্ষ ব্যক্তিকে কালিমার পড়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র তালকীন করো। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯১৬, ৯১৭)
অর্থাৎ তার পাশে বা সামনে আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে, এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না; এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হল, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে শুধু কালিমা পড়তে থাকা।
বিজ্ঞাপন
কেউ ইন্তেকাল করলে তার গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার দায়িত্ব বর্তায় অন্য মুসলমানদের ওপর। এবং এ দায়িত্ব পালনে দেরি করা কাম্য নয়। যতদ্রুত সম্ভব এই কাজগুলো সম্পন্ন করে ফেলা উচিত।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)
মৃতকে বহন করে কবরস্থান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন উচ্চৈঃস্বরে কালিমা তাইয়েবা পড়তে থাকে। অনেকে জানতে চান, এই আমলটি কি ঠিক? ঠিক না হলে এই সময় যারা লাশের সঙ্গে যায় তাদের করণীয় কী?
ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে. মৃতব্যক্তির সঙ্গে গমণকারীদের উচ্চৈঃস্বরে জিকির করা মাকরূহ। এসময় লাশ বহনকারীদের করণীয় হল, নীরবে নিঃশব্দে চলা এবং আখেরাতের কথা চিন্তা করা।
হজরত ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إذَا كَانَ فِي جِنَازَةٍ أَكْثَرَ السُّكُوتَ وَحَدَّثَ نَفْسَهُ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃতব্যক্তির সঙ্গে যেতেন তখন অধিক পরিমাণে নীরব থাকতেন এবং চিন্তামগ্ন থাকতেন। -(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৫)
হাসান বসরী রহ. থেকে বর্ণিত, কায়েস ইবনে উবাদা রা. বলেন-
كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم يَسْتَحِبُّونَ خَفْضَ الصَوْت عِنْدَ ثَلاَثٍ، عِنْدَ الْقِتَالِ، وَعِنْدَ الْقُرْآنِ، وَعِنْدَ الْجَنَائِزِ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা তিন সময় চুপ থাকতে পছন্দ করতেন। যুদ্ধ, কুরআন তিলাওয়াত এবং লাশের নিকট। -(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৩)
সুতরাং লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চৈঃস্বরে কালিমা তাইয়েবা পড়ার আমলটি বিশুদ্ধ নয়। তবে কেউ যদি জিকির করতেই চায় তাহলে নিঃশব্দে মনে মনে জিকির করতে পারবে, উচ্চৈঃস্বরে নয়।
-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৫৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩০; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৯৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯২; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৪
এনটি