বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস
হাত ধোয়া নিয়ে যা বলেছেন নবীজি
মানুষ প্রতিটি কাজে হাত ব্যবহার করে। নাওয়া-খাওয়া থেকে পোশাক পরিধান, হাতের স্পর্শ ছাড়া কোনও কাজই সম্ভব নয়। হাতের ব্যবহার ছাড়া কিছু ভাবাই যায় না। দুই হাত আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত। কোনও দুর্ঘনায় অথবা জন্মসূত্রে কারও দুই হাত বা একটি হাত না থাকলে তিনিই এই নেয়ামতটির কদর বুঝতে পারেন।
নেয়ামতের যথাযথ ব্যবহার
বিজ্ঞাপন
মানুষের উচিত প্রতিটি নেয়ামতের মতো হাতের যথাযথ ব্যবহার করা। অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ সঠিক ব্যবহার না হলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের মতো হাতও মানুষের বিরুদ্ধে কেয়ামতের দিন সাক্ষী দিবে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেবো, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ -(সুরা ইয়াসিন, আয়াত, ৬৫)
পরিচ্ছন্নতা ও যত্ন
হাতকে পাপাচার থেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি এর যত্ন নেওয়া ও পরিচ্ছন্ন রাখাও আবশ্যক। নোংরা ও অপরিচ্ছন্নতা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র; তিনি পবিত্রতাকেই ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন; তাই পরিচ্ছন্নতাকেই পছন্দ করেন। ... সুতরাং তোমরা তোমাদের (ঘর-দুয়ার ও) আঙিনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখ, ইহুদিদের মতো (অপরিচ্ছন্ন ও অপরিষ্কার) রেখ না।’ -(তিরমিজি : হাদিস নং ২৭৯৯)
কোরআনে হাত ধোয়ার নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালাও পবিত্র কোরআনে মানুষকে হাত ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমরা যখন নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও, কিংবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নিবে। (সূরা: মায়িদাহ, আয়াত: ৬)
ঘুম থেকে উঠে হাত ধোয়ার নির্দেশ নবীজির
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাত না ধুয়ে কোনও কিছু ধরতে নিষেধ করেছেন। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
তোমাদের মধ্যে কেউ যখন অজু করে তখন সে যেন তার নাকে পানি দিয়ে ঝাড়ে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যায় ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন অজুর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে। -(বুখারি, ১৬২)
আরও বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন তিন বার হাত না ধুয়ে তা পানির পাত্রে না ঢোকায়,কারণ তার জানা নেই তার হাত কোথায় ছিল বা কোথায় ঘুরাফেরা করেছিল। ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে। -(আবু দাউদ, ১০৫)
খাবারের আগে হাত ধোয়ার নির্দেশ
অনুরূপভাবে খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার আদেশ দিয়েছেন রাসুল (সা.)। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানাহারের ইচ্ছে করলে, তার উভয় হাত ধুয়ে নিতেন। এরপর খাবার গ্রহণ করতেন কিংবা পান করতেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৭; বুখারি, হাদিস : ২৮৮; মুসলিম, হাদিস : ৩০৫; আবু দাউদ, হাদিস : ২২২; আহমাদ, হাদিস : ২৪০৮৩)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) খাওয়ার পর কুলি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন। -(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৮৪; )
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় নিজের মাথা ও শরীর ধৌত করা।-(বুখারি, হাদিস : ৮৯৭; মুসলিম, হাদিস : ৮৪৯)
এনটি