অপবিত্র শরীরে কোনও কিছু স্পর্শ করা যাবে?
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা মানুষের একান্ত স্বভাবজাত ও প্রয়োজনীয় বিষয়। পবিত্র থাকলে মন সতেজ থাকে, নিজেকে ভারমুক্ত ফুরফুরে মনে হয়। নামাজ, রোজা, হজসহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো বিধানই পবিত্রতার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্যে ওঠো, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তগুলো কনুই পর্যন্ত ধৌত করো এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গিঁটসহ ধৌত করো। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারাদেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ণ হও অথবা প্রবাসে থাকো অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসো অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করতে চান- যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ -(সুরা মায়েদা : ৬)
বিজ্ঞাপন
আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ -(সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৩৩)
হজরত আবু মালিক আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক অংশ।’ -(মুসলিম : ৪২২)
বিভিন্ন কারণে মানুষের শরীর অপবিত্র হয়ে যায়, কিছু কিছু পবিত্রতা থেকে অজু করে নিলেই শরীর পবিত্র হয়ে যায়। আবার কিছু অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে চাইলে গোসল করতে হয়। তিনটি কারণে গোসল না করলে পবিত্রতা অর্জন হয় না, কারণগুলো হলো, স্বপ্নদোষ, স্ত্রী সহবাস, হায়েজ-নেফাস থেকে মুক্ত হওয়া।
কখনো শরীর অপবিত্র হয়ে গেলে আমাদের উচিত দ্রুতই নিজেকে পবিত্র করে নেওয়া উচিত। তবে কোনও কারণে পবিত্রতা অর্জনে দেরি হলে কেউ যদি অপবিত্র শরীরে কোনও খাবার পাত্র, কাপড় বা অন্য কোনও বস্তুতে হাত দেয় তাহলে কি সেই বস্তুটিও নাপাক হয়ে যাবে?
ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে, অপবিত্র ব্যক্তির হাতে যাদি স্পষ্ট কোনও নাপাকি না থাকে তাহলে এর কারণে পাত্র বা যেই বস্তু স্পর্শ করা হয়েছে তা নাপাক হবে না। তবে যদি হাতে কোনও ধরনের নাপাকি থাকে এবং তা ওই বস্তুতে লেগে যায় তাহলে এর কারণে ওই পাত্র বা কাপড় নাপাক হয়ে যাবে।
এক হাদিসে আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন, ‘আমি ঋতুস্রাব অবস্থায় কিছু পান করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিলে তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে মুখ রেখে পান করতেন এবং আমি হাড়ের মাংস খাওয়ার সময় তিনি তা আমার নিকট থেকে নিয়ে আমার মুখ লাগানোর স্থানেই মুখ লাগাতেন।’ -(মুসলিম, কিতাবুল হায়েজ, ১/১৩৪)
হজরত ইসহাক ইবনে মানসুর রহ. হজরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে একবার তার সাক্ষাৎ হলো এমন অবস্থায়, যখন আবু হোরায়রা রা. অপবিত্র, অর্থাৎ তার ওপর তখন গোসল ফরজ ছিলো। আবু হোরায়রা রা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে আমি চুপি চুপি সরে পড়লাম এবং গোসল করার পরে তার কাছে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় ছিলে? কই গিয়েছিলে? আমি বললাম, আমি অপবিত্র ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুমিন কখনো এমন অপবিত্র হয় না যে, তাকে স্পর্শ করা যাবে না।-(তিরমিজি,১২১)
এনটি