মৃত ব্যক্তির দোষচর্চা ইসলামে নিষিদ্ধ যে কারণে
মানুষের জন্ম-মৃত নির্ধারিত। কেউ চিরকাল এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে না। মৃত্যুর মতো ধ্রুব সত্যকে আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিন যেমন চিরন্তন বিশ্বাস করে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এমনকি স্রষ্টাকে মানতে না চাওয়া অবিশ্বসীরাদেরও অস্বীকারের সুযোগ নেই। মৃত্যুর মাধ্যমেই একদিন এই রঙ-রসে ভরা পৃথিবীর মায়াজাল ছাড়তে হবে।
মৃত্যু অবধারিত
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ -(সুরা নিসা, আয়াত, ৭৮)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’-( সুরা আম্বিয়া, আয়াত, ৩৫)
মৃতের স্বজনদের দায়িত্ব
কেউ মারা যাওয়ার খবর শুনলে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন পড়তে হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারা (মুমিনরা) কোন মুসিবতে আক্রান্ত হলে বলে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬)
এছাড়াও মৃতের স্বজন ও প্রতিবেশীদের পাঁচটি কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। কাজগুলো হলো, গোসল, কাফন, জানাজা, জানাযা বহন ও দাফন।
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জানাজা করে দ্রুত লাশ দাফন কর। কেননা যদি মৃত ব্যক্তি পুণ্যবান হয়, তবে তোমরা ‘ভাল’-কে দ্রুত কবরে সমর্পণ কর। আর যদি অন্যরূপ হয়, তাহলে ‘মন্দ’-কে দ্রুত তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দাও।’ -(মিশকাত, ১৬৪৬)
মৃত ব্যক্তির সমালোচনা ও দোষচর্চা নয়
কারও মৃত্যুর কথা শুনে হাসি-তামাশা ও সমালোচনা করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বরং মৃতের ভালো কাজের আলোচনা করতে বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০০)
মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়; জীবিতাবস্থায় ভালো-মন্দ কাজ সবারই হয়ে থাকে। অনেক সময় আমরা অন্যের দোষচর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু নিজের দোষ-পাপের দিকে খেয়াল রাখি না। অথচ অন্যের দোষচর্চার বিষয়ে সতর্ক করে রাসুল সা. -এর সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তুমি যখন তোমার সঙ্গীর দোষচর্চা করতে ইচ্ছা করো, তখন তোমার নিজের দোষ স্মরণ করো। -(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩২৮) তাই মৃতের ভালো কাজগুলো উল্লেখ করে তার জন্য দোয়া করা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
আরেক হাদিসে উম্মুল মুমিমীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা মৃতদেরকে গালমন্দ করবে না, কারণ তারা যে কর্ম করেছিল সেগুলোর কাছে তারা পৌঁছে গেছে। -(বুখারি, ১৩৯৩)
মৃতের দোষ গোপন রাখার পুরস্কার
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে মৃতের গোসল দেয় ও তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ তাকে ৪০ বার ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি মৃতকে কাফন পরায়, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের রেশমের কাপড় পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খনন করে তাতে কবর দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত মৃতের জন্য ঘরের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিদান দেন।’ -(মুসতাদরাকে হাকিম, ১/৫০৫)
অন্যের দোষত্রুটি গোপন রাখার বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা অন্য বান্দার দোষত্রুটি এ পার্থিব জীবনে গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।’ -(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৪৪)
এনটি