প্রতীকী ছবি

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব। এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব-আনন্দও তাদের নিজস্ব। ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব আনন্দে অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি সমর্থন করে না। বরং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথা বলে ইসলাম। 

এক ধর্মাবলম্বীদের ওপর অন্য ধর্মের রীতি-নীতি চাপিয়ে দেওয়া ইসলামে সুস্পষ্ট অন্যায়। মক্কার মুশরিকরা যখন নবীজির কাছে প্রস্তাবনা পেশ করল যে, ‘এসো আমরা একবছর আমাদের মূর্তিগুলোর পূজা করি, আর পরের বছর আল্লাহর ইবাদত করি।’ নবীজি (সা.) দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন আল্লাহ তায়ালা সুরা কাফিরূন নাজিল করেন-

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ - وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ - وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ

অর্থাৎ —‌‘বলুন, হে কাফিররা! আমি ইবাদত করি না, তোমরা যার ইবাদত কর। তোমরাও তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্যে, আমার দ্বীন আমার জন্যে। -(সুরা কাফিরূন)

আকীদাগত বা বিশ্বাসগত দিক থেকে একজন মুওয়াহহিদ (একত্ববাদী মুসলিম)-এর জন্য অন্যদের ধর্মাচারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন,

لا تدخلوا عليهم في كنائسهم يوم عيدهم، فإن السخطة تنزل عليهم

‘তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাজিল হতে থাকে।’ -(আবদুর রাযযাক, আলমুসান্নাফ : ১৬০৯)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়।’ -(সুরা লুকমান, ৩১ : ১৩)

শিরকের অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ আরও বলেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শিরক করার পাপ ক্ষমা করবেন না, কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করল, সে তো মহাপাপে লিপ্ত হলো।’ -(সুরা নিসা, ৪ : ৪৮)

তবে এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলাম এতে পূর্ণ সমর্থন দেয় ও দায়িত্ব গ্রহণ করে।

ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তাদের উৎসব পালন করতে ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে ইসলামী শাসনব্যবস্থার সময়গুলোতে। 

হজরত ওমর রা. তার শাসনামলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের كنيسة  (কানীসা) বানানোর সুযোগও দিয়েছেন। সুতরাং অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থান, নিজস্ব পরিধির মধ্যে তাদের ধর্মপালন ও পালনের অধিকার একটি সমর্থিত ও স্বীকৃত বিষয়। এটি ইসলামেরই নীতি। 

এনটি