অন্যের ক্ষতি করলে আল্লাহ যে শাস্তি দেবেন
ইসলামে অন্যের ক্ষতি করা নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত কাজ। এরপরও দিন দিন মানুষের মানসিক বিকৃতি বাড়ছে। সমাজের একে অপরের অন্যায্য অনৈতিক ব্যবহারে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ পাশবিক হয়ে উঠছে, সামান্য স্বার্থের কারণে। একে অপরের ক্ষতিসাধন করা একেবারে মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অপরের অনিষ্ট তথা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকাকে সদকা বা দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু মূসা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের দান-খয়রাত করা ওয়াজিব। সাহাবিরা বলেন, সে যদি তা করতে সক্ষম না হয় বা তা করতে না পারে?
বিজ্ঞাপন
তিনি (নবী করিম সা.) বলেন, তাহলে সে স্বহস্তে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং দান-খয়রাত করবে। সাহাবিগণ বলেন, যদি তার সে সামর্থ্য না থাকে বা সে তা না করতে পারে? তিনি বলেন, তাহলে সে দুস্থ-বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। সাহাবিগণ বলেন, সে যদি তাও না করতে পারে? তিনি বলেন, তাহলে সে সৎ কাজের আদেশ দেবে। তারা বলেন, যদি সে তাও না করতে পারে? তিনি বলেন, তাহলে সে অপরের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবে। এটাই তার জন্য দানস্বরূপ। -(সুনানে আবু দাউদ: ৩৬৩৫)
আরেক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযিয়াল্লাহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্যও করা যাবে না। যে অন্যের ক্ষতি করল আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।’ -(সুনানে দারাকুতনি: ৩০৭৯)
এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ নিজেকে যেমন ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে, তেমনি অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে। হাদিসের ব্যাখ্যাকার মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, ‘এই কথা স্পষ্ট যে, শারীরিক, আর্থিক, পার্থিব ও পরকালীন সব ধরনের ক্ষতি এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।’ -মিরকাতুল মাফাতিহ: ৮/৩১৫৬
ইসলামি শরিয়তের সাধারণ বিধান হলো- ক্ষতিকর বিষয় নিষিদ্ধ। ক্ষতি হওয়ার আগে প্রতিহত করা এবং ক্ষতি হয়ে গেলে তা দূর করা। ইসলাম স্পষ্টভাবে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করতে নিষেধ করেছে। যারা অন্যদের ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয় হাদিসে তাদের অভিশপ্ত বলা হয়েছে।
সাহাবি হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।’ -(সুনানে তিরমিজি: ১৯৪১)
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন। -( তিরমিজি, ২৬২৭)
সুতরাং মুমিনের উচিত নিজেকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা এবং অন্যকেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা।
এনটি