সহজেই ওমরা পালনের আমল
মক্কা-মদিনার প্রতি আকর্ষণ ও হৃদয়ের টান থেকে প্রত্যেক মুসলমান চায় হজ ও ওমরা পালন করতে। বারবার পবিত্র ভূমিতে গিয়ে আল্লাহর ঘর ও রাসুলের রওজা জিয়ারত করে হৃদয় প্রশান্ত করতে। কিন্তু সবারই এই ইচ্ছাপূরণ করা সম্ভব না অর্থ সংকট ও বিভিন্ন পারিপর্শ্বিকতার কারণে। তবে বায়তুল্লাহ ও রাসুলের রওজার প্রেম, আকুতি সবসময় জাগ্রত থাকে হৃদয়ে।
মক্কার প্রতি প্রেম ভালোবাসার আকুতি থেকে অনেকের হৃদয়ে সুপ্ত প্রশ্ন জাগে এমন কোনও আমল আছে কিনা যা আদায় করলে সহজেই ওমরা পালনের সৌভাগ্য লাভ হয়।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি উপমহাদেশের বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে এক ব্যক্তি একটি চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি নিজের অন্তরে ওমরা পালনের সুপ্ত বাসনা ও নিজের অপারগতার কথা জানিয়ে বলেন—
‘আমার ওমরা পালনের অনেক ইচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও উপায়ে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এমন কোনও আমল কি আছে যার কারণে হজেই ওমরা পালনের সৌভাগ্য লাভ হতে পারে!’
চিঠির উত্তরে দেওবন্দের ওয়েবসাইট থেকে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই সবকিছু তাওফিকদাতা। তবে কিছু আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সহজেই ওমরা পালনের সৌভাগ্য দান করতে পারেন এমন কিছু আমল হলো-
১) দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা। সালাতুল হাজতের বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনু আবি আওফা থেকে বর্ণিত আছে যে- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বা কোনও আদম-সন্তানের কাছে যদি কারও কোনো প্রয়োজন হয়— তবে সে যেন অজু করে এবং খুব সুন্দরভাবে যেন তা করে। এরপর যেন দুই রাকআত নামাজ আদায় করে।
এরপর যেন আল্লাহর হামদ করে ও রাসুল (সা.)-এর উপর দরূদ সালামের পর এই দোয়াটি পড়ে-
আরবি :
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لاَ تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلاَّ غَفَرْتَهُ وَلاَ هَمًّا إِلاَّ فَرَّجْتَهُ وَلاَ حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلاَّ قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হা-জাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর-হামার রা-হিমিন।- (তিরমিজি, হাদিস : ৪৭৯; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৪)
২) প্রত্যেক নামাজের পর আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা যেন তিনি সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেন, বিষয়টি সহজ করে দেন। এবং ওমরা পালনের মাধ্যমগুলো সহজ করে দেন।
৩) সময়মতো জামাতের সঙ্গে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা এবং কোনও নামাজ যেন কাজা না হয় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আর বেশি বেশি দরূদ শরিফের আমল করা উচিত।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৮৪)
এই আমলগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি দেওবন্দের ওয়েবসাইট থেকে আরও বলা হয়েছে, যদি কেউ আমল ও চেষ্টা করতে থাকে এবং তার মনে ওমরা করার প্রবল ইচ্ছে থাকে কিন্তু এরপরও ওমরায় যাওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হয় তাহলে সে ব্যক্তি ঠিকই এর সওয়াব পেয়ে যাবে।
ওমরা পালনের ফজিলত
ওমরা পালন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ওমরা বলা হয় নিয়ত করে ইহরামসহ কাবা শরিফের চারপাশ সাতবার তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার সাঈ করা এবং মাথা মুণ্ডানোকে।
ওমরা পালনের বিশেষ কোনো সময় নেই। হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরা পালন করা যায়। হজের সফরেও ওমরা করা যায়।
ওমরার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, এক ওমরা থেকে পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহগুলোর জন্য কাফফারাস্বরূপ। -(বোখারি, ১৬৮৩; মুসলিম, ৩৩৫৫)।
আরেক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরা আদায় করো। কেননা হজ ও ওমরা দরিদ্রতাবিমোচন ও গুনাহ দূর করে দেয়, ঠিক সেভাবে, যেভাবে হাপরের আগুন লোহা, স্বর্ণ ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়।’ -(সুনানে তিরমিজি, ৮১০)
এনটি