প্রতিশ্রুতি ভাঙলে যে গুনাহ হয়
অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম গুণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ প্রসঙ্গে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ -(সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩৪)
অন্যত্র মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’-(সুরা মায়েদা, আয়াত: ১)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘(বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরা এমন) যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।’-(সুরা রাদ, আয়াত: ২০)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো। তোমরা পাকাপোক্ত অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করো না এবং প্রকৃতপক্ষে তোমরা তো নিজেদের জন্য আল্লাহকে জিম্মাদার বানিয়েছো, নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন, যা তোমরা করো।’-(সুরা নাহল, আয়াত : ৯১)
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখা বিবেকবহির্ভূত এবং মারাত্মক অন্যায়। ইসলামী শরিয়তে যেসব কাজ জঘন্য এবং নিকৃষ্ট ওয়াদা ভঙ্গ করা তেমনই একটি গর্হিত এবং পাপকাজ।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা কেন এমন কথা বলো! যা কাজে পরিণত করো না, এটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ যে তোমরা বলবে এমন কথা যা করবে না।’-(সুরা : সফ, আয়াত : ২-৩)
অন্য আয়াতে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের সন্ধিচুক্তি পালন করো।’-(সুরা : সফ, আয়াত : ০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার স্বার্থে ওয়াদা ভঙ্গকারীদের নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন। দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের কাছে পরাজয় বরণ করে ওয়াদা ভঙ্গ করলে এর ক্ষতিও মরাত্মক। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
যে লোক নিজ (ওয়াদা) প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবে এবং পরহেজগার হবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন। যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য বিনিময়ে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোনো অংশ নেই। আর তাদের সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। -(সুরা ইমরান : আয়াত ৭৬-৭৭)
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মুনাফিকের আলামত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি ১. কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, ৩. তার কাছে আমানত রাখা হলে সে খেয়ানত করে।’-(বুখারি, হাদিস : ১/৩৩)
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীর ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনও মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য অথবা তার ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করবে, আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এমন অবস্থায় ঘটবে যে, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। এ কথার সত্যতার জন্য আল্লাহতায়ালা অবতীর্ণ করেন, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রি করে, তারা আখিরাতের নেয়ামতের কোনো অংশই পাবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৫৯)
এনটি