পাপ জীবনে যেসব সংকট নিয়ে আসে
শয়তান সব সময় মানুষকে বিপদগামী করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। সে চায় মানুষ যেন নেক আমলের মাধ্যমে তার রবের নৈকট্য অর্জন করতে না পারে এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হতে না পারে।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
বিজ্ঞাপন
সে (শয়তান) বলল, ‘সে দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদের (আদম সন্তানকে) পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।’ সে (শয়তান) বলল, ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে উপস্থিত হব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ -(সুরা আরাফ : আয়াত ১৪-১৭)
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ যেসব পাপ করে এর কারণে আল্লাহ তায়ালা পরকালে শাস্তি দেবেন। পরকালের শাস্তি ছাড়াও পাপচারে লিপ্ত হলে পার্থিব জীবনেও বিভিন্ন ধরণের সংকট নেমে আসে। কোরআন হাদিসের আলোকে এর কিছু তুলে ধরা হলো-
রিজিক ও জীবিকা সঙ্কট
পাপের কুপ্রভাবে মানুষের রিজিকে সঙ্কীর্ণতা নেমে আসে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই ভাগ্য পরিবর্তন করে না, নেক আমল ছাড়া আর কিছু আয়ু বাড়ায় না এবং কৃত পাপের কারণেই বান্দা জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষ স্বীয় গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। -(ইবনে মাজাহ-৪০২২)
দরিদ্রতার কশাঘাত
শয়তানের প্ররোচনায় যারা পাপে অভ্যস্ত হয়, দরিদ্রতা তাদের গ্রাস করে নেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘শয়তান তোমাদের দরিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়।’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৮)
পরাজয়ের গ্লানি ভোগ
এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সংখ্যায় অধিক হবে; কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে সমুদ্রের ফেনার মতো। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তরে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহন’ আপতিত করবেন। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল ‘ওয়াহন’ কী? তিনি বলেন, দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা। -(আবু দাউদ : হাদিস : ৪২৯৯)
নিঃসংজ্ঞতা
আল্লাহর সঙ্গে যখন কোনো ব্যক্তির সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয় তখন সে একাকীত্বে ভোগে, শূন্যতা অনুভব করে। হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আমি আল্লাহর অবাধ্য হলে তার প্রতিক্রিয়া আমার গাধা ও খাদেমের আচরণের মধ্যে দেখতে পাই। -(হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নাঈম ৮/১০৯)
অন্তরে অন্ধকার অনুভূত হওয়া
মানুষ রাতে যেমন অন্ধকার অনুভব করে, গুনাহগার ব্যক্তিও নিজ অন্তরে অনুরূপ অন্ধকার অনুভব করে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নিশ্চয় নেক আমলের দরুণ চেহারায় উজ্জ্বলতা সৃষ্টি হয়, অন্তরে নূর সঞ্চারিত হয়, রিজিকে প্রশস্ততা আসে, শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং আমলকারীর জন্য সৃষ্টিজীবের অন্তরে ভালোবাসা জন্মায়। অপরদিকে গুনাহের কারণে চেহারা কালো হয়ে যায়, অন্তরে অন্ধকার তৈরি হয়, শরীরে ক্লান্তি আসে, রিজিক সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং গুনাহগারের জন্য সৃষ্টিজীবের মনে বিদ্বেষ জন্ম নেয়। -(আল জাওয়াবুল কাফী, ইবনুল কায়্যিম)
এনটি