চোখের সমস্যা থাকলেও চশমা পড়তে চাননা এমন অনেকেই কন্টাক্ট ‍লেন্স ব্যবহার করেন, কেউ আবার চোখের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যও কন্টাক্ট ‍লেন্স ব্যবহার করেন। ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, চোখে পাওয়ারের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা নেই। বরং চোখকে সুরক্ষিত রাখতে তা ব্যবহার করা অপরিহার্য।  

তবে চোখে সমস্যা না থাকলে শুধু ফ্যাশনের জন্য কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করেন আলেমরা।  হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা অভিশম্পাত করেছেন সেসব নারীদের উপর যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়, তেমনি যারা ভ্রু সরু (প্লাক) করে, যারা সৌন্দর্য বাড়াতে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা মহান আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। -(বুখারী, ৪৮৮৬)

তবে কেউ যদি চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন তাহলে অজু করার সময় কি তা খুলে অজু করতে হবে নাকি চোখে রেখে দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে অজু করলেই হয়ে যাবে এবং এই অজুতে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

এ বিষয়ে ফেকাহবিদ আলেমরা বলেন, অজু বা গোসলের জন্য চোখের ভেতরের অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। তাই অজু-গোসলের সময় চোখের লেন্স খুলতে হবে না। খোলা ছাড়াই অজু হয়ে যাবে এবং এই অজুতে নামাজ আদায় করলে নামাজ হয়ে যাবে।

 

চোখের ভেতরের অংশ ধোয়া জরুরি নয়

ইমাম শাফী রহ. বলেন, অজুর সময় চেহারার উপরের এবং প্রকাশ্য অংশ ধুতে হয়, ভেতরের কোনও অংশ ধোয়া জরুরি নয়। আমি কাউকে এই মতের বিরোধীতাকার‌ী পাইনি।

ইবনে কুদামা রহ. বলেন, বিশুদ্ধ মত হলো অজু-গোসলের জন্য চোখের ভেতরের অংশ ধোয়া সুন্নত নয়, কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তা করেননি এবং করার নির্দেশ দেননি। আর চোখের ভেতরের অংশ ধুতে গেলে এতে চোখের সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। - (আলমুগনী, ১/৭৭)

শায়েখ ইবনে উসাইমিন রহ.-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, কেউ লেন্স পড়ে থাকলে অজু ও গোসলে কি তার পবিত্রতা অর্জন হবে?

চোখের সমস্যার কারণে লেন্স

জবাবে তিনি বলেন, লেন্স পড়ে অজু করলে পবিত্রতা ও অপবিত্রতার আগে লেন্স পরার বিষয়ে জানতে চাওয়া উচিত। কেউ যদি চোখের দৃষ্টির সমস্যার কারণে লেন্স পরে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, সমস্যার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। 

ছেলেরা সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য লেন্স ব্যবহার করতে চাইলে...

তবে যদি কেউ সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ফ্যাশনের জন্য ব্যবহার করতে চায়, তাহলে পুরুষদের বিশেষত তরুণদের এটা ব্যবহার না করার পরামর্শ দিব। তবে চোখের সমস্যার জন্য ব্যবহার করতে পারবে। কারণ, তখন এটা ফ্যাশনের জন্য হবে না বরং সমস্যা ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য হবে।

মেয়েরা সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য লেন্স ব্যবহার করতে চাইলে...

আর যদি মেয়েরা সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এসব ব্যহহার করে। যেমন মেয়েদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

ওরা পরম দয়াময় আল্লাহর প্রতি যে কন্যা-সন্তান আরোপ করে, ওদের কাউকেও সে কন্যা সন্তানের সংবাদ দেওয়া হলে তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। (ওরা কি আল্লাহর প্রতি এমন সন্তান আরোপ করে,) যে অলংকারে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ক কালে স্পষ্ট যুক্তি দানে অসমর্থ ? - (সুরা যুখরুফ, আয়াত, ১৭-১৮)

আয়াতে মেয়েদের দুটি গুণের কথা বলা হয়েছে, এরমধ্যে একটি হলো, মেয়েরা সাবালিকা হওয়ার সাথে সাথেই সুন্দর ও মনোরম জিনিসের প্রতি তাদের মনের আকর্ষণ সৃষ্টি হয় (এবং নিজ দেহের সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আর তাদের ভরণ-পোষণ করতে হয় পুরুষকে)। 

তাই মেয়েরা সৌন্দর্য বাড়ানো জন্য লেন্স ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনও প্রাণীর চোখের সাথে সাদৃশ্য না হয়ে যায়, যেমন বিড়াল, খোরগোশ এমন প্রাণী। কারণ পবিত্র কোরআন ও হাদিসে প্রাণীদের উদাহরণ প্রায় সবসময় নিন্দা এবং মন্দের উদাহরণ দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে।

তবে লেন্স কোনওভাবে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অন্তরায় নয়। কারণ, লেন্স চোখের ভেতর ব্যবহার করা হয়। আর চোখের ভেতরের অংশ ধোয়া অবশ্যক নয়।বরং চোখের ভেতরের অংশ ধোয়াও ঠিক নয়, এতে চোখের সমস্যা হতে পারে।

-ইসলাম, সুওযাল জাওয়াব ‍ও দেওবন্দ ফতোয়া (১৬৪৫৫৩) অবলম্বনে

এনটি