দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে মানুষ মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে ভাবে না। কিন্তু এই মায়ার জাল ছেড়ে একদিন পরপারে পাড়ি জমাতেই হবে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রথমধাপ হবে কবর। মানুষ পৃথিবীতে মৃত্যু-কবর নিয়ে খুব একটা না ভাবলেও কোনো আত্মীয়ের মৃত্যু, কাফন-দাফন, করব জিয়ারতসহ বিভিন্ন কারণে কবরস্থানের সঙ্গে তার এক অদৃশ্য সম্পর্ক সবসময় থাকে। বিভিন্ন সময় যাওয়া-আসা চলে কবরস্থানে।

অনেক সময় কবরস্থানে অবস্থানকালে নামাজের সময় হয়ে যায়, কিন্তু কবরস্থানে নামাজ জায়েজ হবে কিনা তা জানা থাকে না অনেকের, তাই এক একধরনের দ্বিধা-সংশয় কাজ করে।

এ বিষয়ে ইসলামী সমাধান হলো, ফেকাহবিদ আলেমরা কবরস্থানে নামাজ পড়ার অনুমতি দেন না। কারণ, কবরকে সামনে রেখে নামাজ পড়া অনেকটা কবরকে সিজদা করার সাদৃশ, যা শিরক। তাই কবরস্থানে নামাজ পড়ার অনুমতি নেই। 

তবে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, যদি কবরস্থানে কেউ নামাজ পরার মতো কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তাহলে নামাজের জায়গাকে দেয়াল অথবা সুতরা জাতীয় কোনো বস্তু দিয়ে কবর থেকে এমনভাবে আলাদা করে নিতে হবে, যেন কেউ দেখলে ভাবার সুযোগ না থাকে যে সেই ব্যক্তি কবরকে সিজদা করছে- যদি এমন ভাবার সুযোগ না থাকে, তাহলে সেটাকে আর কবরস্থানে নামাজ পড়ার পর্যায়ে ধর হবে না।

তাই কোনো কারণে কবরস্থানে নামাজ পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন, কোনোভাবে কবরে সেজদা হয়ে না যায়। এ বিষয়ে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, কবরকে সিজদা করা এতটা গুনাহের কাজ যে মহানবী (সা.) কবরে সিজদাকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন।

হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি জায়গায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন, ময়লা রাখার স্থানে, কসাইখানায়, কবরস্থানে, পথিমধ্যে, গোসলখানায়, উট (পশু)-শালায় এবং বাইতুল্লাহর (কাবা ঘরের) ছাদে। -(তিরমিজি ৩৪৬, ইবনে মাজাহ (৭৪৬)

হজরত আবু সাঈদ রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গোসলখানা ও কবরস্থান ছাড়া সমগ্র জমিনই মসজিদ (তথা নামাজের স্থান হিসেবে গণ্য)। -(আবু দাউদ ৪৯২.তিরমিজি, ৩১৭)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের ধ্বংস করুন। কেননা তারা তাদের নবীদের করবকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৪৩৭)

হজরত জুনদুব (রা.) থেকে বলেন, আমি রাসুল (সা.) -এর মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে তাঁকে বলতে শুনেছি যে তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোনো খলিল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইব্রাহিমকে যেমন খলিল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলিল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মতের মধ্যে থেকে কাউকে খলিল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবু বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান, তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি। ’

-( সূত্র : মুসলিম, হাদিস : ১০৭৫.  -(তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৩৬; উমদাতুল কারী ৪/১৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৬)

এনটি