মিসওয়াক করার উপকারিতা
মিসওয়াক করা হলো- গাছের ডাল ইত্যাদির মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করা। মিসওয়াক করা মহানবী (সা.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। অজু ও নামাজের সময় মিসওয়াক করা সুন্নত। অন্যান্য সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়।
মিসওয়াক করার পার্থিব ও পরকালীন অনেক ফায়দা ও উপকারিতা রয়েছে। আল্লামা ইবন আবেদিন বলেছেন, মিসওয়াকে রয়েছে ৭০টির ঊর্ধ্বে উপকারিতা। তিনি বলেন, ‘মিসওয়াকের উপকারিতা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় আর সর্বোচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হয়।’ (ফাতাওয়ে শামি : ১/২৩৯)।
বিজ্ঞাপন
মিসওয়াক কখন করবেন?
মিসওয়াক করার সময় ৯টি। যথা—১. নামাজের সময়, ২. কোরআন মাজিদ তিলাওয়াতের সময়, ৩. অজু করার সময়, ৪. ঘুম থেকে জাগ্রত হলে, ৫. মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হলে, ৬. ঘুমানোর পূর্বে, ৭. দীর্ঘ সময় কথা বলার পর, ৮. পানাহারের পর, ৯. দুর্গন্ধযুুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর।
মিসওয়াকের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য
মিসওয়াক করা আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। মহানবী (সা.) থেকে মিসওয়াক প্রসঙ্গে ৪০টি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, যখনই জিবরাইল (আ.) আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতেন। এতে আমি আশঙ্কাবোধ করলাম যে (মিসওয়াক করে) আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দেব (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২২২৬৯)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন তখনই অজু করার আগে মিসওয়াক করতেন।’ (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাত, হাদিস নং ৩৫২)
মিসওয়াক করা সুন্নত
মহানবী (সা.) বলেছেন, নবী-রাসুলদের সুন্নত হলো চারটি। যথা—১. লজ্জা করা, অন্য বর্ণনায় খতনা করা, ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. বিয়ে করা, (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫১)
মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, মিসওয়াক হলো মুখ পরিষ্কার করার উপকরণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় (আহমদ, নাসায়ি, মিশকাত হাদিস নং ৩৫০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেছেন, যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম, তবে অবশ্যই তাদের এশার নামাজ বিলম্ব করার এবং প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম (বুখারি হাদিস নং ৮৮৭; মুসলিম হাদিস নং ২৫২)
মিসওয়াক করা দ্বীনি স্বভাব
হুজায়ফা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য উঠতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা প্রথমে নিজের মুখ পরিষ্কার করতেন (সহিহ বুখারি, মুসলিম, ৩৪৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ১০টি কাজ দ্বীনি স্বভাবের অন্তর্গত—১. গোঁফ ছোট করা, ২. দাড়ি লম্বা করা, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. পানি দ্বারা নাক সাফ করা, ৫. নখ কাটা, ৬. আঙুল খিলাল করা, ৭. বগলের চুল উপড়ে ফেলা, ৮. গুপ্তস্থানের চুল কাটা, ৯. পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করা ১০. কুলি করা। (মিশকাত হাদিস নং ৩৪৯)
যে জিনিস দ্বারা মিসওয়াক করা উত্তম
তিক্ত, কাঁচা ও নরম গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা উত্তম। মহানবী (সা.) জয়তুন ও খেজুরগাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করতেন। পিলুগাছের মিসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্ক সতেজ হয়। দাঁতের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব পূরণ করে। ব্রাশ ব্যবহারে মুখ পরিষ্কার হয়, দুর্গন্ধ দূর হয় ও সুন্নত আদায় হয়। কিন্তু ডাল ব্যবহারে যে ফায়দা তা পাওয়া যায় না।
মিসওয়াক কেমন হওয়া উচিত
মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুলের মতো মোটা এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মিসওয়াক করতে সুবিধা হয়।
মিসওয়াক করার পদ্ধতি : মিসওয়াক করার সুন্নত পদ্ধতি হলো মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং ওপর থেকে নিচে মিসওয়াক করা। আড়াআড়িভাবে না করা। মাড়ির ভেতর ও বাইরে জিহ্বার গোড়া পর্যন্ত মিসওয়াক করা। মিসওয়াক ধরার সময় ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মিসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী ওপর এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে থাকবে।
মিসওয়াকের পার্থিব উপকারিতা
১. আলী (রা.) বলেছেন, মিসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব হয়। ২. দাঁত জীবাণুমুক্ত হয়। ৩. দাঁতের ক্যালসিয়াম পূরণ হয়। ৪. দারিদ্র্য দূর হয় এবং পরিবারে সচ্ছলতা আসে। ৫. পাকস্থলী রোগমুক্ত হয়। ৬. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। ৭. মনে প্রফুল্লতা আসে। ৮. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ৯. হৃদয় পরিচ্ছন্ন হয়। ১০. চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ১১. দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়। ১২. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
মিসওয়াকের পরকালীন উপকারিতা
১. ফেরেশতারা মিসওয়াককারীর সঙ্গে মুসাফাহা করেন। ২. আরশ বহনকারী ফেরেশতারা তার জন্য ইস্তেগফার করেন। ৩. বিজলির মতো পুলসিরাত পার হবে। ৪. আমলনামা ডান হাতে পাবে। ৫. ইবাদতে আনন্দ পাবে। ৬. মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হবে। ৭. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে। ৮. দোজখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ৯. গুনাহমুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। ১০. আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। ১১. সুন্নত পালন করার সওয়াব প্রাপ্ত হবে। ১২. ইবাদতে ৭০ গুণ সওয়াব পাবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সুন্নত তরিকা অনুযায়ী মিসওয়াক করে ইহকালীন ও পরকালীন ফায়দা হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।