ঘরের কাজে নারীকে সহযোগিতা সুন্নত
সংসারিক জীবনে নারীদের কাজের কমতি নেই। সময়ে সময়ে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন উপলক্ষে তাদের কাজের চাপও বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে ও দীর্ঘক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের অবসাদ-ক্লান্তিও পেয়ে বসে তাদের। তাই ঘরের কাজে পুরুষের সামান্যখানি সহযোগিতা নারীদের এনে দিতে পারে অনেকটা স্বস্তি ও প্রশান্তি।
আল্লাহ তাআলা মুমিন নর-নারীদের পরস্পর সহযোগী আখ্যা দিয়েছেন। আদতেই একজন আরেকজনের সম্পূরক। ফলে একে অপরের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়াটাই সমীচিন। তাহলে দাম্পত্য, পারিবারিক ও সাংসারিক জীবন সুন্দর, সুখময় ও শান্তিপূর্ণ হবে।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—
ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেন এবং মন্দ থেকে বিরত রাখেন। নামাজ প্রতিষ্ঠা করেন, জাকাত দেন এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করেন। তাদেরই ওপর আল্লাহতায়ালা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।
(সুরা তাওবা, আয়াত : ৭১)
মহানবী (সা.)-ও অংশ নিতেন ঘরের কাজে
ব্যক্তিজীবনে মহানবী (সা.) একজন সাধারণ মানুষের মতো ছিলেন। অবসর সময়ে তিনি পারিবারিক কাজে অংশ নিতেন। নিজের কাজ নিজেই করে নিতেন। আসওয়াদ (রা.) বলেন, আমি একবার আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম—
‘রাসুল (সা.) ঘরে কী কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, অর্থাৎ গৃহস্থালি কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো, তখন নামাজে চলে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও রাসুল (সা.) কতটা নমনীয় ছিলেন, তা সহজেই অনুমেয়। তিনি অতি সাধারণ কাজও নিজ হাতে করেছেন। বিভিন্ন হাদিসে সেগুলোর বিবরণ পাওয়া যায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘তিনি অন্যান্য মানুষের মতোই একজন ছিলেন। নিজের কাপড়ের উকুন পরিষ্কার করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২৬১৯৪)
আয়েশা (রা.) অন্য বর্ণনায় বলেন, ‘তিনি নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন এবং সাধারণ মানুষের মতোই ঘরের কাজকর্ম করতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৮৯)
অন্য এক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ করতেন।’ (ফাতহুল বারি : ১৩/৭০)
এসব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, ঘরোয়া কাজে অংশ নেওয়া রাসুল (সা.)-এর আদর্শ। এতে সংকোচ বা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। বরং ঘরের নারীদের সহযোগিতা করা এবং তাদের কষ্ট লাঘবে কাজ করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। যেন নারীরা কাজের পাশাপাশি আমল-ইবাদতেও সময় দিতে পারেন।