কিছুদিন আগে মিশিগান রাজ্যে নির্বাচনী সীমানার নতুন মানচিত্র প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রশি টানাটানি হয়েছে। এক অংশ চেয়েছে বাংলাদেশিরা এক মানচিত্রে চলে আসুক, শক্তি বাড়ুক। আরেক অংশ হ্যামট্রামিক বাংলা টাউনের শক্তি ধরে রাখার পক্ষে কাজ করেছে।

নতুন মানচিত্রে দেখা গেছে, স্টেট হাউজে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বড় দুটি এলাকা দুটি মানচিত্রে পড়েছে। ডিস্ট্রিক্ট-১৪ -তে পড়েছে ওয়ারেন সিটি। ডিস্ট্রিক্ট-৯ -এ পড়েছে হ্যামট্রামিক বাংলা টাউন ও ডেট্রয়েট সিটির কয়েকটি বাঙালিপাড়া। স্টেট হাউজে মোট জনসংখ্যা ৯০ হাজার। কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি, ৯০ হাজারের মধ্যে অর্ধেক বাংলাদেশি। এর মধ্যে ডিস্ট্রিক্ট-৯ -এ ২৫ হাজার এবং ডিস্ট্রিক্ট-১৪ -তে ২০ হাজার বাংলাদেশি আছেন। 

এদিকে স্টেট সিনেট-৩ মানচিত্রে বেশিরভাগ বাংলাদেশি পড়ে গেছেন। এ মানচিত্রের অধীনে ২ লাখ ৫৬ হাজার জনসংখ্যা। কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি, এর মধ্যে ৫০ হাজারই বাংলাদেশি। তারা বলেছেন, আমেরিকার নিউইয়র্কের পরই বাংলাদেশিদের বড় ঘাঁটি মিশিগানে। হ্যামট্রামিক, ওয়ারেন, ডেট্রয়েট ও স্টালিং হাইটস সিটিতে বেশিরভাগ বাংলাদেশি বসবাস করেন। ভৌগলিক ভাবেও এসব সিটি কাছাকাছি। 

বিশ্লেষকরা বলেছেন, মিশিগানের আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশি ভোটাররা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবেন। বিশেষ করে রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে ডিস্ট্রিক্ট-৯ এবং ডিস্ট্রিক্ট-১৪ তে। এছাড়া সিনেট-৩ আসনে প্রার্থী যে-ই হোক না কেন, বাংলাদেশি ভোটারদের গুনতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশি যোগ্য প্রার্থী দিলে জেতার সম্ভাবনাও আছে।

জানা গেছে, আমেরিকায় আদমশুমারির রিপোর্টের ভিত্তিতে ১০ বছর পর পর স্টেট কনগ্রেশনাল, স্টেট সিনেটর ও স্টেট হাউজ তিন স্তরে নির্বাচনী সীমানা পুনর্বিন্যাস (রি-ডিস্ট্রিক্টিং) করে থাকে। অতীতে মিশিগান রাজ্যে রাজনীতিবিদ কমিশন রিডিস্ট্রিক্টিং মানচিত্র আঁকত। সেই পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবারই প্রথম ফ্রিডম নাগরিক কমিশন মানচিত্র এঁকেছে।  

গত বছরে ১৩ সদস্যের ফ্রিডম কমিশন কয়েক দফায় গণশুনানি করেছে। সরাসরি, ভার্চুয়ালি এবং ফোনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে নাগরিকরা মতামত দিয়েছেন। কমিউনিটির যারা একসঙ্গে বসবাস করে, বাজার হাট করে, একই কালচারে জড়িত, তাদের দিকটা খেয়াল রাখে কমিশন। এতে নিজ জাতিগোষ্ঠী থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।     

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট সুমন কবির বলেন, এক ম্যাপে, একসঙ্গে থাকার জন্য দলমত নির্বিশেষে কমিউনিটির বেশিরভাগই এক হয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কমিশনে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের তিনটি খসড়া গেজেটে একেবারে হুবহু না হলেও ৯৯ ভাগই আমাদের প্রস্তাবিত ম্যাপটাই ছিল। ফাইনাল হিয়ারিংয়ের সময় আমাদের কমিউনিটির গুটিকয়েক লোক কমিশনে আরেকটি ম্যাপ প্রস্তাব করে কমিউনিটিকে দুই টুকরো করে ফেলেন। 

সুমন বলেন, আমাদের ম্যাপটি বাস্তবায়িত হলে কমিউনিটিই সুফল পেত। বিশেষ করে কেউ যদি কমিউনিটি থেকে স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ হতে চাইতেন, কমিউনিটির ভোটেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারতেন। এখন দুটো মানচিত্রে ভাগ হয়ে পড়ায় আমরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে কমিউনিটির কদর আগের চেয়ে বহু বেড়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের কমিউনিটির নেতাদের তারা কাছে টানেন।

কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট দেলোয়ার আনসার বলেন, হ্যামট্রামিক সিটির ড্রাইভ থেকে ওয়ারেন সিটির ১৪ মাইল পর্যন্ত এক মানচিত্রে থাকার জন্য কমিশনের কাছে আমরা দাবি করেছিলাম। কারণ এ গণ্ডির ভেতরেই বেশিরভাগ বাংলাদেশির বসবাস। তবে শতভাগ সফল না হলেও স্টেট সিনেটের ডিস্ট্রিক্ট-৩ এবং স্টেট হাউজ ডিস্ট্রিক্ট-১৪ এর মানচিত্রে আমাদের দাবির ৭০ ভাগ প্রতিফলন হয়েছে। রি-ডিস্ট্রিক্টিং নিয়ে আমরা যতটুকু ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, ততটুকু সফলতা পেয়েছি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগানের (বাম) সভাপতি জাবেদ চৌধুরী বলেন, রি-ডিস্ট্রিক্টিং সর্ম্পকে আমাদের কমিউনিটিকে প্রথমে জাগিয়ে তোলেন উদ্যমী তিন তরুণ সুমন কবির, দেলোয়ার আনসার ও ইকবাল ফেরদৌস। আমরাও চেয়েছি, সব বাংলাদেশি একত্রে, এক মানচিত্রে থাকতে। আমাদের কমিউনিটি বড় হোক এবং শক্তি বাড়ুক। ওয়ারেন, বাংলা টাউন, হ্যামট্রামিক পাশাপাশি সিটি। এক মানচিত্রে থাকার সুযোগ ছিল। কিন্তু কয়েকজন আরেকটি মানচিত্র প্রস্তাব করেন। তারা এটা করায় কমিউনিটির একটি বড় অর্জন নষ্ট হয়েছে। আমরা যেন ক্ষুদ্র ও ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করি। ওয়ারেন-হ্যামট্রামিক অঞ্চলভিত্তিক চিন্তা না করে আমরা যেন বড় পরিসরে চিন্তা করি। আসুন সবাই মিলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করে যাই। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি আমেরিকান কংগ্রেস সভাপতি মো. কামাল রহমান বলেন, তাদের অবস্থান থেকে তারা মনে করেছেন হ্যামট্রামিকসহ শুধু বাঙালি কমিউনিটি একটা ডিস্ট্রিক্ট পেয়ে যাবে। আসলে রি-ডিস্ট্রিক্টিং এভাবে কাজ করে না। তাদের দুই-এক জনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, ট্রয় সিটিতে বাংলাদেশি আছেন, ফার্হিমটনেও আছেন এবং রচেস্টার সিটিতে আছেন বাংলাদেশি। সব বাংলাদেশিকে এক ম্যাপে রাখা প্র্যাকটিক্যালি সম্ভব না। কৌশলে দেখতে হবে, কোন জায়গা সবচেয়ে কাছে এবং শক্তিশালী অবস্থানে। ৮ মাইল ম্যাকনোকিলসের পরে একজন বাংলাদেশি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। ৯ মাইল থেকে ১৪ মাইল রায়ানের আশপাশে আছেন বাংলাদেশি। কিন্তু ওয়ারেন সিটির সঙ্গে এক করতে যেয়ে টু অ্যান্ড হাফ মাইল যদি গ্যাপ হয় আর মাঝখানে বাংলাটাউন গ্যাপ হয় তাহলে হ্যামট্রামিক বাংলাদেশির শক্তি বিভক্ত হয়ে যাবে। বাংলাটাউন, হ্যামট্রামিক আর নর্থ ডেট্রয়েটের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে একসঙ্গে রাখতে পেরেছি, এখানে আমাদের কমিউনিটি সাকসেসফুল হয়েছে। হিয়ারিংয়ের সময় কেউ না কেউ উপস্থিত থেকেছেন। লেগে থাকার কারণে বেশিরভাগ বাংলাদেশিই নতুন মানচিত্রে কভার হয়েছেন।          
 
এপিআইএ ভোটের পরিচালক রেবেকা ইসলাম বলেন, জনসংখ্যার দিক আছে। জেলাগুলো কাছাকাছি হতে হবে। কাউন্টি, শহর এবং টাউনশিপ সীমানাও দেখেছে কমিশন। অর্থাৎ ছয়টি ক্রাইটেরিয়ায় রি-ডিস্ট্রিক্টিং হয়েছে। ওয়ারেনে বাংলাদেশিদের কোনো ডাটাবেজ নেই। হ্যামট্রামিক বাংলা টাউন আমাদের শক্তি। কারণ ওখানে একসাথে বহু বাংলাদেশি থাকেন। কমিশনের খসড়া তালিকায় দেখি বাংলা টাউন তিনটি ডিস্ট্রিক্টে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলা টাউন, হ্যামট্রামিককে একসঙ্গে রাখার জন্য কাজ করেছি। আমাদের দাবি যৌক্তিক হওয়ায় কমিশনে অ্যাপ্রুভ হয়েছে।

আরএইচ