কানাডায় ওমিক্রনে ম্লান বড়দিনের আনন্দ
কানাডায় করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বড়দিনের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধ আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কানাডিয়ানরা এ বছরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করতে পারছেন না বড়দিন।
কানাডায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ‘বড়দিন’ বা ‘ক্রিসমাস ডে’। দিনটিকে ঘিরে চলে নানা আয়োজন। আগে থেকেই বিভিন্ন অফিসে ও বাসা-বাড়িতে শুরু হয় পার্টি। ইতোমধ্যেই আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে অফিস আদালত, বড়দিনের উপহার সামগ্রীর কেনাকাটায় বিভিন্ন মলে তুলনামূলকভাবে গতবছরের তুলনায় বেশি ভিড় দেখা গেছে। পরিবহনগুলোতেও লেখা হয়েছে হ্যাপি হলিডে।
বিজ্ঞাপন
পারিনা জ্যাকব বলেন, বড়দিন মানে নতুন চেতনা ও মুক্তির কথা। সংগ্রামশীল পৃথিবীতে আমরা সবাই আতঙ্কিত। আগামী বড়দিন আমরা সবাই একসঙ্গে একত্রিত হয়ে করতে চাই- ঈশ্বরের কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা।
জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, নশ্বর এই পৃথিবীতে আমরা কেউই থাকব না। হিংসা, লোভ-লালসা ও করোনা মহামারি থেকে আমাদের দূর রেখে সকলের মাঝে সুখ শান্তি দান করবেন, ক্রিসমাস ইভে ঈশ্বরের কাছে এ বছর এটাই আমাদের প্রার্থনা।
অ্যানথনি জ্যাকব বলেন, সমগ্র বিশ্ববাসীর সুখ শান্তি কামনা করে এ বছর আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব। সব কিছুই যেন আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। করোনা মহামারির এই অবস্থা থেকে যেন ঈশ্বর আমাদের মুক্তি দান করেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ২০ ডিসেম্বর থেকে ওমিক্রনের কারণে কানাডার কুইবেক প্রদেশের স্কুল, বার, জিম ও সিনেমা থিয়েটার বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে থার্টি ফাস্ট নাইটে টরন্টোর প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্তত তিনটি বড় ধরনের আয়োজন ছিল। টিকেটও বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল সরকার নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করায় তা বাতিল করা হয়েছে। কেবল বাংলাদেশিই কমিউনিটিই নয়, পুরো অন্টারিও, কুইবেক আরো বেশ কয়েকটি প্রদেশও একই পথ ধরেছে।
ফেডারেল সরকার জরুরি না হলে দেশের বাইরে কোথাও না যেতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো স্পষ্ট করে বলেছেন, কোথাও যাওয়ার সময় এটা না।
অন্টারিও সায়েন্স টেবল ওমিক্রন নিয়ে যে মডেলিং করেছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো পদক্ষেপ না নিলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কেবল অন্টারিও প্রভিন্সেই ৬০০ ব্যক্তিকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। হিসাব করে দেখা গেছে, কানাডায় নতুন যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের ৫০ শতাংশই ওমিক্রনের কারণে। প্রতি ২.৮ দিনে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হয়ে গেলে মোট করোনা রোগী কতজনে দাঁড়াবে তা নিয়েই সরকার উদ্বিগ্ন।
অন্যদিকে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল সরকারের নতুন নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুসারে, ইনডোরে ১০ জনের বেশি লোক সমাগম করা যাবে না। অর্থ্যাৎ বাড়ীতে ১০ জনের বেশি লোক নিয়ে কোনো ধরনের পার্টি বা কিছু করতে পারবেন না। শপিং মল, গ্রোসারি স্টোর, রেস্টুরেন্টে ক্যাপাসিটির অর্ধেক লোককে ঢুকতে দেওয়া যাবে।
বড়দিনের ছুটিতে যাতে ওমিক্রনের সংক্রমণ অতি মাত্রায় না ছড়ায়, সেজন্যই এই আগাম সতর্কতা, আগাম প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই অনেকেই তাদের নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে এই পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। কানাডিয়ানরা মনে করেন, করোনার এই মুহূর্তে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই সবচেয়ে বড় কথা। বেঁচে থাকলে বড়দিন আবার আসবে।
ওএফ