মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর আবাসন দেবে নিয়োগকর্তা। ওয়ার্কার্স মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড অব হাউজিং অ্যান্ড এমেনিটিজ আইন ১৯৯০ (অ্যাক্ট ৪৪৬) আইনের আওতায় নিয়োগকর্তা এটা বহন করবে। 

সম্প্রতি স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, কর্মীর স্ট্যান্ডার্ড আবাসন নিশ্চিত করবে নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি। মালয়েশিয়ার মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড অব হাউজিং অ্যান্ড এমেনিটিজ আইন ১৯৯০ (আইন ৪৪৬) এ উল্লেখ আছে কর্মীর থাকার জায়গায় ছাদ, পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য সম্মত পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও খেলাধুলা, বিনোদন, খাবারের স্থানসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও হাসপাতালে স্থানান্তরের সুবিধা থাকবে। 

এসব দেখাশোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকবেন। এদিকে ২০২০ সারের ১ সেপ্টেম্বরের এক আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, লাইট ও ফ্যানসহ রেস্ট এরিয়া থাকবে, খাবার জায়গায় চেয়ার, টেবিল, লাইট, ফ্যান থাকবে। শোবার রুমে ফ্যান ও লাইট থাকবে। একটি রান্নার জায়গা থাকবে। বাথরুম ও টয়লেট থাকবে। কাপড় শুকানোর জায়গা থাকবে। প্রাথমিক চিকিৎসার কিট ও ডাস্টবিন থাকতেই হবে।

সাধারণ কন্ডো বা বাসার ক্ষেত্রে একজন কর্মীর জন্য একটি কক্ষে ৩.৬ স্কয়ার মিটার জায়গা বরাদ্দ থাকতে হবে এবং ছয়জনের জন্য একটি বাথরুম, টয়লেট থাকবে। ডরমেটরির (হোস্টেল) ক্ষেত্রে প্রতিজনের জন্য একটি কক্ষে ৩ বর্গ মিটার জায়গা থাকতে হবে এবং ১৫ জনের জন্য একটি টয়লেট, বাথরুম থাকবে। 

একজন কর্মীর জন্য নিয়োগকর্তা আবাসনের জন্য সর্বনিম্ন যে সুবিধাদি দেবে সেগুলো হলো- একটি সিংগেল বেড যা আকারে ১.৭ বর্গ মিটারের কম হবে না। যদি ডবল ডেক বেড হয় তাহলে দুই বেডের মধ্যে ফাকা জায়গা ০.৭ মিটারের কম হবে না। ৪ ইঞ্চি পুরুত্বের ম্যাট্রেস, একটি বালিশ ও একটি কম্বল দিতে হবে। একজন কর্মীর জন্য একটি লকার থাকবে, যেখানে কর্মী ব্যক্তিগত মূল্যবান জিনিস রাখবে এবং নিজের দখলে রাখতে পারবে। 

নিয়োগকর্তা নিজে আবাসন ব্যবস্থাপনা করতে পারবে বা চুক্তির মাধ্যমে অন্য ব্যবস্থাপনায় আবাসনে (হোস্টেলে) কর্মী রাখতে পারবে। তবে অবশ্যই আইন ও বিধি অনুযায়ী সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে।  এসব নিশ্চিত করতে না পারলে নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি প্রতিটি অপরাধের জন্য ৫০ হাজার রিংগিত জরিমানা দিতে হবে। 

একই অপরাধ পুনরায় সংঘটিত হলে প্রতিদিন এক হাজার রিংগিত করে জরিমানা হবে। নিয়োগকর্তা আইন ও বিধি অনুযায়ী আবাসন নিশ্চিত করছে না এমন চিত্র উঠে এসেছে মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় ও লেবার ডিপার্টমেন্টের অভিযানে।

মালয়েশিয়ার সংসদে মানবসম্পদ উপমন্ত্রী ডাতুক আওয়াং হাশিম বলেন, ৪৬.৭১ শতাংশ নিয়োগকর্তা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড অব হাউজিং অ্যান্ড এমিনিটিজ আইন পরিপালন করেনি। ফলে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লেবার ডিপার্টমেন্ট ১৩ হাজার ৮৫টি কমপ্লায়েন্স নির্দেশনা এবং ৩ হাজার ২৮৯টি ইম্প্রুভমেন্ট নির্দেশাবলী জারি করেছে। লেবার ডিপার্টমেন্ট এক হাজার ১৬৯টি অনুসন্ধান করে ৮১৭টি জরিমানা এবং ১৩৪ আদালতে বিচারের সম্মুখীণ হয়েছে। 

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় বিদেশি কর্মীর জন্য কেন্দ্রীয় আদর্শ আবাসন ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করছে। ইতোমধ্যে মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ডের নিচে অর্থাৎ খারাপ আবাসনের জন্য ফোর্সড লেবার ইস্যু উত্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক আমদানিকারকরা। মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্মীদের অভাব অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য ওয়ার্কিং ফর ওয়ার্কার নামক একটি ফ্রি এপ চালু করেছে যার মাধ্যমে কর্মী অভিযোগ করতে পারছে। তাছাড়াও ফোর্স লেবার ও অভিবাসী পাচার সংক্রান্ত অপরাধ ঘটতে দেখলে জানানোর জন্য কতিপয় দূতাবাস, এনজিও এবং শ্রম অফিসে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে যৌথভাবে আইএলও ও মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়।

ফোর্সড লেবার এবং মানবপাচার রোধে মালয়েশিয়া সরকার অ্যাকশন প্লান বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে মালয়েশিয়ায় আসা নতুন কর্মীরা যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো আবাসন সুবিধা পাবেন বলে অনুমান করা যাচ্ছে।

ওএফ