কানাডার ক্যালগেরিতে গুণীজনদের স্মরণে শোকসভা
কানাডার ক্যালগেরিতে বাংলাদেশে সম্প্রতি সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের মৃত্যুতে এক শোকসভার আয়োজন করা হয়। ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’র আয়োজনে প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
মাহফুজুল হক মিনুর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত বসু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ মজুমদার।
বিজ্ঞাপন
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন:- কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বায়াজিদ গালিব, মো. মাহমুদ হাসান, খায়ের খোন্দকার রুবেল এবং তাসফিন হোসেন তপু। সভায় প্রথিতযশা কিংবদন্তি ও বরেণ্য শিল্পীদের শোক প্রস্তাব করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বায়েজিদ গালিব।
আলবার্টা সরকারের বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শোকসভার শুরুতে সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী, সাহিত্যিক সাংবাদিক ও গুণীজনদের স্মরণে
সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, ষাটের দশকের পর থেকে যাদের আমরা মঞ্চ এবং টিভি পর্দায় দেখে আসছি, তারা একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। তাদের একে একে সবার চলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। বরেণ্য শিল্পীদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধান অতিথি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের কীর্তিমান ও গুণী মানুষগুলো, যারা সবসময় তাদের নিজেদের সৃষ্টির চিন্তায় মগ্ন থাকতেন, সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজে আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে উজ্জ্বল করে রাখতেন, তারা দিন দিন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমাদের নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সংস্কৃতির স্থিতিশীলতাকে ধরে রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক কর্মকর্তা মাহফুজুল হক মিনু বলেন, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এ চরম সত্যকে আমাদের মেনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও বেগবান করতে নতুন প্রজন্মকে হাল ধরতে হবে। এক্ষেত্রে সৃজনশীল কাজের চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পাঙ্গনের গুণীজনদের চলে যাওয়া দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ভেবেই আমাদের ভবিষ্যতের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সর্বক্ষেত্রেই আমাদের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রয়াত বীর বাঙালিদের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। সাম্প্রতিককালে ধর্মকে পুঁজি করে যে উগ্রবাদের বিস্তৃতি ঘটছে, এর প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আজকের বিরাজমান পরিস্থিতিতে কোভিডকালে আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম।
লেখক বায়েজিদ গালিব বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাঙালিত্ব ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে কখনোই বিচ্যুত হতে দেওয়া যাবে না। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।
কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব খায়ের খোন্দকার রুবেল বলেন, প্রবাসে বসে যখন বাংলাদেশের গুণীজনদের মৃত্যুর কথা শুনি বুকটা হাহাকার করে ওঠে। ছোটবেলা থেকে যাদের মঞ্চ ও টিভিপর্দায় দেখে আসছি, গান শুনে আসছি, সেই কিংবদন্তীরা আজ অমর হয়ে যাচ্ছেন। সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
ক্যালগেরির মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসফিন হোসেন তপু বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের গুণীজনদের চলে যাওয়া দেশের ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এখনও যারা অসুস্থ রয়েছে তাদের জন্য আমাদের দোয়া অব্যাহত থাকবে যেন মহান রাব্বুল আলামীন তাদের নেক হায়াত দান করেন।
বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত বসু বলেন, এ পৃথিবীতে কেউই আমরা চিরদিনের জন্য আসিনি, আমাদের কর্মই বেঁচে থাকবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ মজুমদার বলেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ অমর কে কোথা কবে’ -এ চিরন্তন সত্য মনে রেখেই আমাদের চলতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ের চলে যাওয়া গুণীজনদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। সবার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
সভায় সাম্প্রতিক সময়ে হারানো অনেক খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর, মিতা হক, গীতিকবি ফজল-এ-খোদা, সুরস্রষ্টা অনুপ ভট্টাচার্য, আলী হোসেন, সোলস ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড্রামার সুব্রত বড়ুয়া রনি, সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ, অভিনয় শিল্পী আলী যাকের, সারাহ বেগম কবরী, ওয়াসিম, ড. ইনামুল হক, এস এম মহসীন, আবদুল কাদের, মুজিবুর রহমান দিলু, কায়েস চৌধুরী, মাহমুদ সাজ্জাদ, নাট্যকার ড. আফসার আহমেদ, মান্নান হীরা, কবি ও নির্মাতা আবুল হোসেন খোকন প্রমুখের নাম উল্লেখ করা হয়।
এসএসএইচ