বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবং হিন্দুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার বাংলাদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা দুর্গাপূজার সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে সংঘটিত ন্যাক্কারজনক হামলার পেছনে নষ্ট রাজনীতির উসকানি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

কানাডার বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’র আলোচনায় অংশ নিংয়ে তারা এ কথা বলেন। স্থানীয় সময় বুধবার (২০ অক্টোবর) রাতে ‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংকট কোথায়’ শীর্ষক এ আলোচনায় বক্তারা হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলাকে ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনা করে দুর্বৃত্তদের আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

আলোচনায় অংশ নেন- বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী কবি আসাদ চৌধুরী, টরন্টোর ডেনফোর্থ ইসলামিক সেন্টার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ফারুক আহমদ এবং টরন্টো হিন্দু কালচারাল সোসাইটি ও মন্দিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিবু চৌধুরী। 

কবি আসাদ চৌধুরী তার আলোচনায় স্বাধীনতার আগে থেকে উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক ঘাত-প্রতিঘাত এবং সৌহার্দ্যের অনবদ্য চিত্র তুলে ধরে বলেন, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস-সন্দেহ মানুষের ক্ষতি করে, তাদের ছোট করে দেয়। আমরা এখন পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং সন্দেহের মধ্যে বসবাস করি। এটা দূর করতে হবে। সংখ্যায় যারা বেশি তাদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকের ওপর অত্যচার হয়েছে, তার বিচার হতে হবে। হিন্দু কি মুসলমান এটা কোনো কথা না, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার করার ক্ষেত্রে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না।

ডেনফোর্থ ইসলামিক সেন্টার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ফারুক আহমদ হিন্দু-মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বপক্ষে প্রচারণার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ‘ইন্টারফেইথ হারমোনি’র চর্চা বাড়ানো গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সহনশীলতা বাড়বে।

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম এবং ইসলামী নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পরপরই বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা পূজামণ্ডপে হামলা না করার ফতোয়া বা নির্দেশনা দিলে সেটি কার্যকর হতে পারত। টরন্টোর বিভিন্ন মসজিদে আগামী শুক্রবার জুমার খুতবায় বাংলাদেশে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ওপর নিপীড়নের বিপক্ষে ইসলামের নির্দেশনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমামদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

টরন্টো হিন্দু কালচারাল মন্দিরের সাবেক সভাপতি শিবু চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। নিজ দেশে আমরা কেন নিপীড়িত হব। নিজ দেশের আইন কেন আমাদের প্রটেকশন দেবে না।

নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ধর্মের অবমাননা হয়েছে- এমন গুজব শুনেই কেন মানুষ হিন্দুদের ওপর হামলা শুরু করে তার মনস্তাত্বিক দিক নিয়ে গবেষণা দরকার। ধর্মীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার প্রয়োজন কি না সে ব্যাপারেও মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

এসএসএইচ