কানাডা জাতীয় নির্বাচন : অঙ্গীকার আর প্রতিশ্রুতিতে বিভিন্ন দল
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার ৪৪তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন দলের প্রচার প্রচারণা। চলছে অঙ্গীকার আর প্রতিশ্রুতি দেওয়া। প্রচারণায় সমর্থন দলগুলো কথা বলছেন নতুন নতুন প্রতিশ্রুতির ইস্যুতে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গত জুলাইয়ে জাতিসংঘে নতুন অঙ্গীকার করেছে ট্রুডোর সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০০৫ তুলনায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বলেছে তারা।
বিজ্ঞাপন
কনজার্ভেটিভ নেতা এরিন ও’টুল ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমানোর কথা জানিয়েছেন ।
অন্যদিকে এনডিপি নেতা জাগমিত সিং জলবায়ু ইস্যুতে লিবারেলদের সাম্প্রতিক ঘোষণাকে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি বলে চিত্রায়িত করেছেন। তিনি বলেন, জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে কানাডা। কাজ না করলে জলবায়ু ইস্যুতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কোনো অর্থ নেই।
এদিকে তেল-গ্যাস উৎপাদকদের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে ট্রুডোর অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন। লিবারেল নেতা জাস্টিন ট্রুডো জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে রোববার প্রথমবারের মতো বড় কোনো প্রতিশ্রুতি দিলেন। ট্রুডো বলেন, নির্বাচিত হলে লিবারেল সরকার তেল ও গ্যাস উৎপাদন থেকে পাঁচ বছরে নিঃসরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ২০৫০ সাল নাগাদ এ নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। একই সঙ্গে আলবার্টা, সাস্কেচুয়ান, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরের তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল কমিউনিটির মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ২০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের কথাও বলেছেন তিনি।
এছাড়াও লিবারেল সরকার ইলেকট্রিক যানবাহনের বাধ্যবাধকতার বিষয়েও প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ কানাডায় বিক্রিত ব্যক্তিগত গাড়ির অর্ধেক হতে হবে কার্বন নিঃসরণমুক্ত। ২০৩৫ সাল মোট গাড়ির শতভাগই কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী আরও ৫০ হাজার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লিবারেল পার্টি। এর মধ্যে ১৭ হাজার স্টেশন নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, এবারের নির্বাচনে সবকটি রাজনৈতিক দলই পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় কানাডিয়ানদের ওপর যে দুর্ভোগ নেমে আসবে এবং তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই বিষয়ে সবকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যেই ঐক্যমত আছে। তবে প্রতিকারের পদক্ষেপ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। বিশেষজ্ঞরা লিবারেল পার্টির কর্মসূচিকে অধিকতর কার্যকর গণমুখী হিসেবে অভিহিত করছেন।
বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মাহমুদ হাসান বলেন, জনমুখী কল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। কোয়ালিশন সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে জটিলতার মুখোমুখি হয় তা অবসানে, জাস্টিন ট্রুডোর সরকার একটি শক্তিশালী সরকারের প্রত্যাশায় যে আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে আমি স্বাগত জানাই। লিবারেল, আর যে দলই হোক কানাডার জনগণ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করবে বলে বিশ্বাস করি।
উল্লেখ্য কানাডার ৪৪তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালে। গত মাসে লিবারেল পার্টির নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমনকে সংসদ ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
নির্ধারিত সময়ের দুবছর আগে এই নির্বাচনের প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের যুক্তি হচ্ছে, সংসদে সংখ্যালঘু সরকার এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। সংসদে তাদের নীতি-কর্মসূচি বাস্তবায়নে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার।
অন্যদিকে কানাডায় যে কয়েকবার কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছে সেগুলোর গড় সময়সীমা ছিল ১৮ থেকে ২০ মাস।
এমএইচএস