দক্ষিণ আফ্রিকায় সালিশি বৈঠকে প্রবাসীকে টানাহেঁচড়া

দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্নকেপ প্রদেশের ছোট শহর মিসেস প্ল্যান টাউন সেন্টারে পাওনা টাকা আদায় নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি সালিশি বৈঠক হয়। সেখানে এক প্রবাসীকে নিয়ে বাংলাদেশিদের টানাহেঁচড়ার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে সালিশি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
কমিউনিটি সূত্রে জানা যায়, কেপটাউনের টাউন সেন্টারে মাদার প্ল্যান ইজি টেকইওয়ে খাবার দোকানে কাজ করছিলেন শওকত বিন আশরাফ নামের চট্টগ্রামের লোহাগড়ার এক বাসিন্দা। করোনার আগে তার একটি মুদি দোকানে সাড়ে ৩ লাখ রেন্ড বিনিয়োগ করে অর্ধেক মালিকানা ভিত্তিতে ব্যবসা করতে ইস্ট লন্ডনে যায় আলমগীর তালুকদার। টাকা দিয়ে দোকান বুঝে নেন আলমগীর। এর কিছু দিন পর শওকত বিন আশরাফ ডারবানে বেড়াতে যাবের বলে বের হয়ে যান। এরই মধ্যে বাড়ির মালিক এসে আশরাফকে খোঁজ করেন এবং ৩ লাখ রেন্ড ভাড়া বাবদ পাবেন বলে দোকান ছেড়ে দিতে তাগাদা দেন। পরে আশরাফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান দেশে চলে গেছেন। সাড়ে তিন লাখ রেন্ড বা প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগের দুই মাসের মধ্যে আলমগীরকে শূন্য হাতে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়ে দোকানে তালা ঝুঁলিয়ে দেয় মালিকপক্ষ।
সেসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চেয়ে সহযোগিতা পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী আলমগীর তালুকদার।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে করোনায় লকডাউন শুরু হলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ পুঁজি হারিয়ে পকেট শূন্য আর ঘুমানোর জায়গাটুকু হারিয়ে রাতারাতি পথে বসে যাই। আমার জীবনে চরম দুর্যোগ নেমে আসে।
পরে আশরাফের চট্টগ্রামের লোহাগড়ার বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তার অতীত বিভিন্ন প্রতারণার তথ্য পাওয়া যায়। এরই মধ্যে আশরাফ দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে এসেছেন খবর পেয়ে দেখা করতে গেলে তিনি পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।
সম্প্রতি পাওনাদার আলমগীর জানতে পারেন তিনি কেপটাউনের মিসেস প্ল্যান টাউন সেন্টারে চাকরি করছেন। পরে সেখানে ৭ থেকে ৮ জনকে নিয়ে হাজির হন মুন্সীগঞ্জের আলমগীর তালুকদার। সেখানে সালিশি বৈঠকের একপর্যায়ে স্থানীয় সোমালিয়ান গ্যাংস্টারদের ভাড়া করে পালিয়ে যান শওকত বিন আশরাফ। ঘটনার পর পালিয়ে থেকেই নিজ লোকজনের মাধ্যমে আলমগীর তালুকদার ও কেপটাউন কমিউনিটির লোকজনকে মামলা-হামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের বিভিন্ন কমিউনিটির লোকজন জানান, শওকত বিন আশরাফ একজন পেশাদার প্রতারক। এক শহরে বেশি দিন থাকেন না। তিনি বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সুযোগ বুঝে সটকে পড়েন।
শওকত বিন আশরাফের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে। দেশটিতে ঐতিহ্যবাহী কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ পরিষদ অরগানাইজেশন বাদী হয়ে জোহানেসবার্গের সেন্ট্রাল পুলিশ স্টেশনে তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ দায়ে করে। এছাড়াও মোশাররফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর ১০ লাখ রেন্ড প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন
শওকত বিন আশরাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্কীকার করে তিনি জানান, তার কাছে টাকা নেই। দোকান লস করেছে, দুইজনের সমান ক্ষতি হয়েছে। অন্য ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, দোকান দিয়েছি, ব্যবসা করতে পারিনি বলে মানুষের টাকা দিতে পারিনি। গাঢাকা কেন দিয়েছিলেন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
কেপটাউনের সালিশ নিয়ে কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দিদার ও লিটন মুন্সী জানান, আলমগীর তালুকদারের বিষয়টি সমাধান করার জন্য শওকত বিন আশরাফকে বৈঠকে উপস্থিতি হতে বলা হয়েছে। সবাই মিলে মীমাংসা করার চেষ্টা করব।
থানায় অভিযোগের বিষয়ে তারা জানান, শওকত বিন আশরাফের বিরুদ্ধে যেসব থানায় মামলা হয়েছে সেগুলো আমাদের আওতায় নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার আইন অনুযায়ী কোর্টে বিচার হবে। ভুক্তভোগী প্রবাসীরা চাইলে আমরা কমিউনিটি থেকে তাদের পাশে থাকব।
এমএন