লন্ডনের কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, অত্যন্ত সাহসী, কালজয়ী, সংগ্রামী নেতা ছিলেন ফখরুদ্দিন আহমদ। ১৯৬০-৭০ দশকে বিলেতে জনপ্রিয় এই ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সমাজকর্ম ও মানবকল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। পাশাপাশি সংবাদপত্র, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি তার দরদ ছিল অসীম।

১৯৫৮ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র ‘দেশের ডাক’ এর অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি। লন্ডন বাংলা একাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পূর্ব লন্ডনে কবি নজরুল সেন্টার প্রতিষ্ঠায় তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

তার নামে এখন পূর্ব লন্ডনের বাংলা টাউনে ভ্যালেন্স রোডের পাশেই ফখরুদ্দিন স্টিট গড়ে উঠেছে। সেখানে গড়ে ওঠা প্রায় ৩২টি বড় আকারের ঘরবাড়ি নির্মাণে তার বিশেষ অবদান ছিল বলে জানা গেছে। আর এ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে স্থানীয় পিস স্টিটকে এ নামকরণ করা হয়। এ রাস্তা ও শাহজালাল স্টেটের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশি সিলেটের বাসিন্দা। পিস স্টিটের এ প্রকল্পটি নানা বাঁধা-বিপত্তির পর ১৯৯০ সালের দিকে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়।

জীবদ্দশায় ফখরুদ্দিন আহমদ পূর্ব লন্ডনে অনেকগুলো সামাজিক ও শিক্ষা উন্নয়নমূলক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে কমিউনিটির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– দ্যা স্পিটালফিল্ডস হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন, টাওয়ার হ্যামলেটস ট্রেনিং ফোরাম লন্ডন, টাওয়ার হ্যামলেটস অ্যাসোসিয়েশন ফর রেসিয়াল ইকুয়ালিটি, ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট রেসিয়্যাল ডিসক্রিমিনেশন (১৯৬৮ খ্রি) বেঙ্গলি অ্যাকশন গ্রুপ (১৯৭৪), মাল্টি রেসিডেন্সিয়াল বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন (১৯৭৭-৭৮ খ্রি), স্পিটালফিডস হাউজিং কো-অপারেটিভ (১৯৭৮ খ্রি), স্পিটালফিডস স্মল বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন/এসএসবিএ (১৯৮০ খ্রি), বাংলাদেশি এডুকেশনাল লিডস ইন টাওয়ার হ্যামলেটস (১৯৮২ খ্রি), ব্রিকলেন হাউজিং অ্যান্ড কমিউনিটি এডুকেশন ট্রাস্ট (১৯৮৬ খ্রি)।

তাছাড়া পূর্ব লন্ডনের ৪৬ মার্ডেল স্টিটে নিজস্ব ফ্রি হোল্ড ভবনে বর্তমানে অবস্থিত সেন্ট মেরীজ সেন্টারেরও তিনি ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি। এই সেন্টারের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত ব্রিকলেন হাউজিং অ্যান্ড কমিউনিটি ট্রাস্টের তিনি ছিলেন চেয়ারপারসন।

এরকম অনেকগুলো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে টাওয়ার হ্যামলেটসে এ কমিউনিটিকে এবং কাউন্সিলকে সুন্দর, শান্তিময়, মাদকমুক্ত, উন্নয়নশীল হিসেবে গড়ে তুলতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তবে বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন আত্মপ্রচার বিমুখ, সমাজকর্মে নিবেদিত একজন মানুষ।

তিনি ১৯৮৭ সালের ১৮ জুলাই লন্ডনে মারা যান। তার বাড়ি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর উপজেলার শাহার পাড়া (নারাইনপুর) গ্রামে।

জীবদ্দশায় পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে বসবাস করে জীবনের এতগুলো মূল্যবান সময় ব্যয় করে কমিউনিটির মানুষের জন্য সমাজ উন্নয়নমুখী কাজ করে গেছেন সৎ সাহসী কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ফখরুদ্দিন আহমদ।

লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের বাসিন্দা রওনক আহমদ বলেন, আমি যতদূর জেনেছি ফখরুদ্দিন আহমদ ছিলেন সজ্জন, মানবকল্যাণী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব। এই ভালো মানুষটির প্রতি সম্মান জানিয়ে কাউন্সিল কি তার জন্য আর কিছু করতে পারে না? তাকে সম্মান জানিয়ে কাউন্সিলের নতুন একটি ভবনের নামকরণ বা কোনো সেন্টার তার নামে করতে পারে না?

এ ব্যাপারে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এসএসএইচ