বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও অনেক নারী, পুরুষ, শিশু আছেন যারা নানা কারণে ফুড অ্যালার্জিজনিত ভুক্তভোগী হয়েছেন। চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, পরামর্শ ও সেবা নিচ্ছেন। কেউ কেউ অজ্ঞতা বা অজানার কারণে মৃত্যুর মুখে জীবনটাকেই ঠেলে দিয়েছেন।

ব্রিটেনে ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সির সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বিভিন্ন ফুডে অ্যালার্জি রয়েছে। আর ২ থেকে ৪ শতাংশ শিশুর মধ্যে এ অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে।

ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে তাকে দেওয়া কোনো মেন্যুতে অ্যালার্জিক উপাদান থাকলে সেটা স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে। রেস্টুরেন্টের সেবাদানকারী ব্যক্তিকে অনেকগুলো অ্যালার্জিক উপাদানের কোনো একটি খাবারে থাকলে তা মৌখিকভাবে জানিয়ে দিতে হবে। আর অনলাইনে ফুড অর্ডার করলে সেখানেও অ্যালার্জিক উপাদানের বিষয়ে জানাতে হবে। কিন্তু কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে কি এটি আসলেই জিজ্ঞাসা করা হয়? যদি জিজ্ঞাসা না করে আর ভোক্তার অ্যালার্জি থাকে তাহলে নিজ থেকে জানিয়ে দেবেন।

ব্রিটেনে ২০১৬ সালে ১৫ বছর বয়সী নাতাশা নামের এক কিশোরী খাদ্যে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার কারণে মারা যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে প্রি-প্যাকড ফুডের ক্ষেত্রে আইন করা হয়।

২০২১ সালে নাতাশা ল নামের এ আইন কার্যকর করা হয়। এ আইনের আওতায় যেকোনো রেস্তোরাঁ, রিটেইল শপ বা অন্য যেকোনো খাবার বিক্রির দোকানে ক্রেতা পণ্য নিতে এলে অ্যালার্জির বিষয়টি আগাম জানিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া এসব খাদ্যপণ্যের লেভেলেও অ্যালার্জির উপাদান থাকলে, থাকার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।

লন্ডনের অনেক শপ ঘুরে দেখা গেছে, অ্যালার্জির সতর্কতা বিষয়ক লেখা টাইপ করে দরজায় প্রবেশ পথের কাছে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব লন্ডনের বার্কিংয়ে ১৩ বছর বয়সী হান্না জ্যাকবস কোস্টা কফি হট চকলেট পান করে অ্যালার্জিজনিত কারণে মারা যায়।
যতদূর জানা যায়, এই কোস্টা কফিতে গরুর দুধের উপাদান ছিল, আর গরুর দুধে হান্নার মারাত্মক অ্যালার্জি ছিল। এ বিষয়ে হান্নার মা জানিয়েছিলেন, তিনি বার্কিংয়ের বারিস্তায় একটি শাখায় গিয়ে এ হট চকলেট কেনেন তার মেয়ের জন্য। তবে এটা নেওয়ার আগে তার মেয়ের অ্যালার্জির কথা দোকানদারকে জানান। কিন্তু হান্না একটু চুমুক দেওয়ার পর তার শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত হান্না জ্যাকবস মারা যায়। এরকম আরও অনেক ঘটনা হয়েছে এবং অনেকে অ্যালার্জিজনিত কারণে ভুক্তভোগী হয়েছেন। যা পুলিশ কেইস, আইন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ফুড অ্যালার্জির সচেতনতা, সাবধানতা ও করণীয় প্রসঙ্গে কুইন মেরী ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের শিক্ষক ডাক্তার রেজাউল করিম বলেন, ফুড অ্যালার্জি হলো এমন এক অবস্থা যেখানে শরীর নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর লক্ষণগুলো সাধারণত হালকা হলেও কিছু ক্ষেত্রে খুবই গুরুতর হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে ত্বকে চুলকানি বা ফোলাভাব, ঠোঁট, মুখ, চোখের ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, পেটের ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ডায়রিয়া অন্তর্ভুক্ত। গুরুতর প্রতিক্রিয়া হলে ঠোঁট, মুখ বা গলা ফোলা, শ্বাসকষ্ট, গলা আটকে আসা, ত্বক নীল বা ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। খাদ্য অ্যালার্জি ইমিউন সিস্টেমের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার ফল। চিংড়ি, শুঁটকি, বেগুন,গরুর মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম প্রভৃতি সাধারণ অ্যালার্জিজনিত খাবার, এগুলো থেকে সাবধান থাকতে হবে।

প্রথম ধাপে করণীয়– চিকিৎসা হিসেবে অ্যালার্জিজনিত খাবার এড়িয়ে চলা। অ্যালার্জি পরীক্ষা, এন্টিহিস্টামিন এবং জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। খাদ্য অ্যালার্জি থাকলে খাদ্য লেবেল ভালোভাবে পড়া। তাছাড়া বন্ধু, পরিবার ও কর্মস্থলে বিষয়টি জানানো উচিত। অ্যালার্জি নিয়ে অবহেলা মোটেও উচিত নয়, কারণ কখনো কখনো এ থেকে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

এসএসএইচ