বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রবাসীদের দাবি
স্পেনে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন খোরশেদ আলম মজুমদার নামের একজন। শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাজধানী মাদ্রিদের বাঙালি অধ্যুষিত লাভাপিয়েস এলাকার স্থানীয় একটি হলরুমে কমিউনিটির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে খোরশেদ আলম মজুমদার বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। দোয়া করি, যারা ইন্তেকাল করেছেন এ আন্দোলনে মহান আল্লাহ যেন শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আহত অবস্থায় যারা চিকিৎসাধীন, তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি–
*বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ জুলুম-নির্যাতন হয়েছে। আপনারা আপনাদের মেধা, প্রজ্ঞা, ন্যায় ও ইনসাফ দিয়ে এ দেশকে ভরে দেবেন।
*যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের জন্য এককালীন এবং মাসিক ভিত্তিতে ৩০ বছর পর্যন্ত ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
*শহীদদের নাম শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্ত করতে হবে। যাতে বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে, ন্যায়ের পক্ষে কারা জীবন দিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থাপনায় শহীদদের নামফলক দিতে হবে।
*শহীদদের আত্মত্যাগ যাতে কোনোভাবে নস্যাৎ না হয়, সেজন্য আমরা দেশ এবং প্রবাসের সবাই সজাগ থাকব।
*শহীদদের পরিবারে উপযুক্ত কেউ থাকলে তাদের চাকরি বা দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
*বাংলাদেশে আমরা আর কোনো খুন, গুম, লুট, নৈরাজ্য ও স্বৈরশাসক দেখতে চাই না। আমরা চাই, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
*গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এমন সুযোগ যেন আর না তৈরি হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
*বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।
*বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো ধরনের জুলুম-নির্যাতন করা যাবে না।
*সংখ্যালঘুরা যদি কেউ অন্যায়ভাবে তাদের মন্দিরে গির্জায় বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজেরা দলীয় সুবিধা নেওয়ার জন্য দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম নষ্টের পাঁয়তারা করে তাহলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে।
*বাংলাদেশ অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকগুলো এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে বিদেশে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে সেসব অর্থ ফেরত আনতে হবে। যারা এই কাজে জড়িত এবং সহযোগী তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অর্থপাচারকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
*ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সম্পদের সুষম বণ্টন সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শোষণের রাজনীতি ও সমাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
*বিগত অবৈধ সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, এমপি, আমলা, পুলিশ, র্যাবসহ এদের কলাকুশলীরা ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার/ইউরো ব্যয় করে অগণিত স্থাপনা করেছে। প্রবাসীরা এসব অবৈধ সম্পদের সঠিক তথ্য বাংলাদেশ সরকারকে জানান, যাতে দেশের সম্পদ দেশে ফেরত নেওয়া যায়।
*বর্তমান দলীয় প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুবা যেকোনো অঘটন ঘটতে পারে।
*দলীয়ভাবে বা দলীয় ব্যানারে সন্ত্রাস করলে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে। তারা যেন দেশের কোনো জাতীয় নির্বাচন বা কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারে।
*বিগত ১৫ বছর দেশে হত্যা, খুন, গুম, সংখ্যালঘুদের ও বিরোধীদলের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
*১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কোটা নামে বা অন্য কোনো নামে কোটা বাংলাদেশে থাকবে না। শুধু মেধার ভিত্তিতে সব প্রশাসনিক নিয়োগ করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজে সঠিকভাবে লেখাপড়া হয়নি। এ অবস্থায় এখন শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
*গত ১৫ বছরে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত তাদের আবারও বিসিএস পরীক্ষা দিতে হবে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ স্থির করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও দলীয় দলীয় ব্যক্তি ছাড়া নিয়োগ পায়নি।
*প্রবাসীদের জন্য আলাদা উপদেষ্টা চাই। প্রবাসীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় আছে কিন্তু এটি প্রবাসীদের কোনো কল্যাণ করে না। সব বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং প্রবাসীদের জন্য ২৪ ঘণ্টার সেল গঠন করতে হবে। প্রবাসীদের বিমানবন্দরে, রাস্তাঘাটে ও ঘরবাড়িতে হয়রানি করা হয়। প্রবাসীদের রেমিটেন্স যোদ্ধা বলা হয় অথচ তাদের ন্যূনতম সম্মানও দেওয়া হয় না।
*দেশের পুলিশ, বিডিআর, র্যাব এবং সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনীকে তদন্তের মাধ্যমে দালালমুক্ত ও দলীয়করণমুক্ত করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের স্থান দিতে হবে।
*বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে দেশের যে ৫৭ জন সূর্যসন্তানকে হত্যা করা হয়েছে তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
*শাপলা চত্বরে যে হত্যা চালানো হয়েছে সেখানে জড়িতদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
*শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে আল্লাহ তায়ালাকে চেনা ও জানার মতো কিছু নেই। আমরা চাই, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এবং ইসলামের সঠিক জ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নাস্তিকতা বাংলাদেশ থেকে দূর করতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যাতে তাদের স্ব স্ব ধর্ম পালন করতে পারে। এজন্য তাদের সরকারি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
*বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান এবং পুলিশের প্রধান সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে, অগণিত প্রাণহানি থেকে রক্ষা করেছেন। এজন্য প্রবাসীদের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
*দেশের ভেতরে এবং বাইরে বিগতদিনের সন্ত্রাসী, কলাকুশলী এবং সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নতুবা এরা আবার দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
*বিগত কয়েকদিনে সরকারবিহীন অবস্থায় হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
*অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ৬ মাস থেকে এক বছর হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ব্যতীত কোনো উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
*এমনভাবে সরকার চালাতে হবে, যেন গণমানুষের অধিকার না হরণ করতে পারে। সার্বক্ষণিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
*অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় দেশের। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সঠিক নীতি-কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি।
*কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বর্তমানে রিজার্ভ কত রয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ স্পষ্টভাবে নিয়মিতভাবে জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।
*আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। ভবিষ্যতে যদি কেউ বা কোনো দল সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে তাদেরও নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
*অর্থপাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা চাই, পাচারকৃত অর্থ যেন বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। বর্তমান অর্থনীতির সংকট উত্তরণ ঘটাতে যাতে কাজে লাগানো যায়।
*অন্যায়ভাবে ১৫-১৬ বছরে যে হত্যা-গুম-খুন হয়েছে সংখ্যালঘুদের তার বিচার করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বসবাস করতে পারে মানুষ, তা নিশ্চিত করতে হবে।
*বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। ভারত ও চীনসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সমঝোতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। কোনো দেশের দাদাগিরি বা প্রভুত্ব চাই না।
*২৬ লাখ ভারতীয় চাকরিজীবীকে বিদায় করে দিয়ে দেশি ১২ লাখ বেকারকে চাকরি দেওয়া হোক।
*ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে।
*১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
*আর কোনো স্বৈরাচার, একনায়ক, গণতন্ত্র হত্যাকারীর জন্ম যেন বাংলাদেশে না হয়, সেসব পথ বন্ধ করে দিতে হবে।
*প্রবাসীরা এবং দেশিরা বিদেশে এসে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দেশের বদনাম ছড়ায় যারা তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
এসএসএইচ