সন্তান লালনপালনে অভিভাবকত্বের জ্ঞান থাকা জরুরি। একজন জ্ঞানী অভিভাবক তার সন্তানের সামগ্রিক বিকাশ, সুস্থতা ও ভবিষ্যতের সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারেন।

কানাডিয়ান সেন্টার ফর ইনফরমেশন এন্ড নলেজ আয়োজিত এমপাওয়ারিং দ্য নেক্সট জেনারেশন শিরোনামে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

গত ১৩ জুলাই টরন্টোর ডেনফোর্থ এভিনিউস্থ রেডহট রেস্তোরাঁয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে বন্ধন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ৩৫ জন নবীন এবং প্রবীণ উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ইমাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈকত রুশদী। 

তিনি তার বক্তব্যে কানাডা কীভাবে বহুসংস্কৃতির একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে আজকের অবস্থানে উন্নীত হয়েছে তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। কানাডিয়ান চার্টার অফ রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস এবং কনস্টিটিউশন অ্যাক্ট, ১৯৮২ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘সবার জন্য সম অধিকার, ধর্মীয় এবং বহুসংস্কৃতির চর্চা এখানে বসবাসকারী একজন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিশ্বাস এবং অনুশীলনকে বোঝা এবং সম্মান করা। 

তরুণদের পক্ষে মেন্টর ও মেন্টরশিপ সম্পর্কিত একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সৃজন নাথ।

অনুষ্ঠানে নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, সন্তান লালনপালনে অভিভাবকের জ্ঞান জরুরি। আপনি অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে কীভাবে বড় করছেন এর চেয়ে বেশি দরকার আপনার অভিভাবকত্বের জ্ঞান কতটুকু সমৃদ্ধ করছেন। 

বেসরকারি সংস্থা পেইস এর নির্বাহী পরিচালক ইমামুল হক বলেন, বর্তমানে অনেক তরুণ বেশ জ্ঞানী, তারা বয়স্কদের মেন্টর হিসেবে কাজ করতে পারেন। 

টরন্টোয় বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ আবদুল হালিম মিয়া বলেন, আমাদের নিজে বলার চেয়ে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশিষ্ট কৃষিবিদ কামাল মুস্তফা হিমুর মতে, পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করতে একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। 

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আসমা আহমাদ বলেন, তরুণ এবং বয়স্ক উভয় প্রজন্মের মূল্যবান দক্ষতা এবং জ্ঞান আছে। অল্পবয়সীরা নতুন প্রযুক্তি এবং আধুনিক প্রবণতাগুলি জানে, আর পুরানো প্রজন্ম প্রজ্ঞা, পরামর্শ এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রদান করে। 

কানাডিয়ান সেন্টার আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বেসরকারি সংস্থা বিআইইসের পরিচালক মোস্তফা আকন্দ বলেন, কানাডায় তরুণ এবং বয়স্কদের মধ্যকার সম্পর্ক বৃদ্ধি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যা মোকাবিলা করতে না পারলে নতুন প্রজন্মের ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।

সিবিএন নিউজ এর সম্পাদক মাহবুব ওসমানী বলেন, নীরবতা থেকে শেখা অর্থপূর্ণ পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা এবং প্রজ্ঞা প্রদান করে। 

বাংলাদেশি চিকিৎসক হুমায়রা তাহিতি বলেন, নবীন-প্রবীণের সম্পর্ক অর্থপূর্ণ না হলে মানসিক সমস্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কানাডিয়ান সেন্টারের পরিচালক মুশতাক আহমেদ, উন্নয়ন কর্মী রীনা সেন গুপ্তা, সংগঠনের ভলান্টিয়ার নুসরাত জাহান, রিহান রহমান, আর্য নাথ, মেথিউ শিন, শামসুন্নাহার বেগম, নিকিতা মেহরুন, প্রিয়ম ঘোষ, আজওয়াদ আলম, হারিম রাইয়ান, রেজওয়ানা ইসলাম প্রমুখ।

কানাডিয়ান সেন্টার ফর ইনফরমেশন এন্ড নলেজ একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। গভর্নমেন্ট অফ কানাডার সহায়তায় ‘ব্রিজিং জেনারেশন’ নামক এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রবীণ এবং নবীনের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। 

সংগঠন মনে করে, পরিবার, সম্প্রদায় এবং কর্মক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়া, সহযোগিতা এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি করার জন্য প্রজন্মের সেতুবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এমএসএ