বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত করে কানাডায় বিএনপির দুটি কমিটি অনুমোদন করা হয় গত ১ মে। কিন্তু কমিটি দুটি অনুমোদনের পর বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে কানাডা কুইবেক বসবাসরত বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা কর্মীরা। 

ঘোষিত কমিটি বাতিল চেয়ে কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে পার্ক ভিউ রিসিপশন হলে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেন বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা। 

এতে বক্তব্য রাখেন সদ্য ঘোষিত কানাডা পূর্ব বিএনপি কমিটির সহ-সভাপতি ফারুক হাওলাদার ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্যুইবেক প্রভিন্স বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নান।

টেলিকমিউনিকেশনে বক্তব্য রাখেন কানাডা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবিএম আব্দুর রাজ্জাক রাজু, বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া, বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ. সামাদ খাঁন নান্টু। 

কানাডা বিএনপির নতুন দুটি আংশিক কমিটি বিলুপ্ত করে, কানাডা বিএনপির সাবেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ কানাডার প্রত্যেক অনুমোদিত প্রভিন্স কমিটির নেতৃবৃন্দসহ গঠনতন্ত্র মোতাবেক পূর্বের কমিটিগুলোর মতো সকলের অংশগ্রহণে নতুন কমিটি গঠনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ জানান তারা।

ফারুক হাওলাদার তার বক্তব্যে বলেন, উত্তর আমেরিকায় বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আনোয়ার হোসেন খোকন নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি অনুমোদন করিয়েছেন। বিশেষ করে ঘোষিত ৮ সদস্য বিশিষ্ট কানাডা পূর্ব বিএনপি কমিটিতে কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন। 

ফারুক হাওলাদার তার বক্তব্যে বলেন, কানাডায় দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির রাজনীতি করে আসা সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই আনোয়ার হোসেন খোকন এই কমিটি অনুমোদন করিয়েছেন৷ যা ইতোমধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আমি একজন সাবেক নেতা হিসেবে আমাকেও এই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে। আমার সঙ্গে পরামর্শ না করেই আমাকে পদে রেখেছেন। এখনও কেন্দ্র থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। 

তিনি বলেন, এর আগে কানাডায় বিএনপির কমিটি সম্মলনের মাধ্যমে করা হলেও সদ্য ঘোষিত এই কমিটি আনোয়ার হোসেন খোকনের মনগড়া ও পছন্দের লোকদের নিয়েই করা হয়েছে। কমিটিতে থাকা অধিকাংশই বিতর্কিত। যাদের কয়েকজন বিগত সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঘোষিত কমিটি থেকে পদত্যাগ না করে কমিটি বাতিল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্র যখন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে তখন আমি কমিটি থেকে পদত্যাগ করবো না। কিন্তু কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা, যোগাযোগ করবো। তবে, যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে এখানে কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন। যারা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে গিয়েছেন এবং বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন। গণসংযোগ করেছেন। 

এই কমিটি বিলুপ্ত করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জানান তিনি৷ 

লিখিত বক্তব্যে ক্যুইবেক প্রাদেশিক বিএনপি সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, অনুমোদিত আংশিক কমিটির অনেকেই বিতর্কিত ব্যক্তি। 

তিনি বলেন, আমরা যখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু দিবসে শোক সভা, দোয়া মহফিল করেছি তখন এই ঘোষিত কমিটির অনেকে গানবাজনার অনুষ্ঠান করেছে। আমরা যখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরেয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তখন এই আংশিক কমিটির অনেকে আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে যোগ দিয়েছে। আমাদের আন্দোলন, সংগ্রামকে বন্ধ করার জন্য তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। 

আব্দুল মান্নান বলেন, ইতোপূর্বে কানাডার প্রত্যেকটি প্রাদেশিক কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হয়েছে। কিন্তু, কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে সদ্য ঘোষিত কানাডার এই দুটি কমিটি নাকি কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কাউন্সিলতো দূরের কথা প্রভিন্সিয়াল নেতৃবৃন্দ এবং কানাডায় যারা দলটি প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাদের কারও সঙ্গেই কোনো ধরনের আলোচনাও করা হয়নি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে কানাডায় যেসব নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে, দুএকজন ছাড়া আর কাউকে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এতে করে যারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে কানাডায় সরকারি ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে কানাডার হাউস অব কমন্সে পিটিশন এনেছেন, পার্লামেন্টারি কমিটিগুলোর সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে বৈঠক করেছেন, কানাডার সিটি, প্রভিন্স, ফেডারেল আইন প্রণেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে কমিটিতে না রেখে তাদের অবদানকে অবমূল্যয়ন ও অপমান করা হয়েছে। 

এমএসএ