কানাডার টরন্টোতে শুরু হচ্ছে ৭ দিনব্যাপী নাট্যকর্মশালা। টরন্টো থিয়েটার ফোকসের আয়োজনে আগামী ৮ জুন থেকে এ অনুষ্ঠান শুরু হবে। যা চলবে ১৬ জুন পর্যন্ত।

এ কর্মশালাতে থাকছে অভিনয়, মঞ্চ পরিকল্পনা, আলোক পরিকল্পনা, আবহ সংগীত, রূপসজ্জা ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা। এক কথায়, একটি নাটক সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে সফল মঞ্চায়নের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই এই কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

মঞ্চনাটক নিয়ে টরন্টোতে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এ বছর প্রতিটি নাটকের দলই নতুন নাটক নিয়ে মঞ্চে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রথম ‌টরন্টো থিয়েটার ফোকস ইমামুল হক নির্দেশিত নাটক ‘এক জোড়া জুতো’ এবং এরপর কানাডার উদীচী ইত্তেলা আলী নির্দেশিত নৃত্যনাট্য ‘মায়ার খেলা’ ও মিঠুন রেজার নির্দেশনায় ‘রক্তকরব’ মঞ্চস্থ করেছে। নাট্য প্রযোজনায় সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যন্যদের সঙ্গে দুই সংগঠনের দুটি নাটকেই (এক জোড়া জুতো ও রক্তকরবী) জনপ্রিয় নাট্যব্যক্তিত্ব মাহমুদুল ইসলাম সেলিম অভিনয় করেছেন।

সাম্প্রতি মঞ্চস্থ হওয়া এই নাটকগুলোতে দর্শকদের ব্যাপক উপস্থিতি থেকে অনুমান করা অসম্ভব নয় যে, টরন্টোতে নাটক দেখার মতো দর্শক আছে, নাটক বোঝার মতো বোদ্ধা আছে। তাই এই ধারাটিকে অব্যাহতভাবে ধরে রাখার জন্য সাত দিনব্যাপী নাট্যকর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে।

নাটককে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সমাজকে এগিয়ে নিতে সমাজ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জনকল্যাণমূলক যেকোনো সামাজিক আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য নাটক হচ্ছে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

কানাডার মতো দেশে সব নাট্যদলগুলোর উদ্দেশ্য এই মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে একটা নাটকপ্রিয় কমিউনিটি গড়ে তোলা। তবে তারজন্য দরকার প্রশিক্ষিত নাট্য অভিনেতা-অভিনেত্রী, নাট্যকর্মী, কলাকুশলী এবং সর্বোপরি নাটক বোঝার মতো বোদ্ধা দর্শকদের প্রয়োজন। একইসঙ্গে প্রয়োজন একটি মঞ্চের ধারণা এবং একটি নাটকের সফল মঞ্চায়নের সার্বিক জ্ঞান। তা নাহলে সফলভাবে নাটক মঞ্চায়ন করা সম্ভব নয়। গান গাইতে গেলে যেমন এর সুর তাল লয় সবই জানা প্রয়োজন, সঠিকভাবে নৃত্য পরিবেশনা করতে গেলে যেমন নৃত্যের প্রতিটি মুদ্রা জানা প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবে নাটকেরও কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে। সেগুলো না জানা থাকলে হয়ত নাটক হবে কিন্তু সঠিকভাবে, সুন্দরভাবে এবং সার্থকভাবে ফুটে উঠবে না।

এই নাট্য কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন নাট্যজন মাহমুদুল ইসলাম সেলিম এবং সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবেন শারমিন শরিফ শর্মী। সেলিম দীর্ঘ ৩৪ বছর নাটক এবং নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত এই অভিজ্ঞতাকে তিনি টরন্টোতে কর্মশালার মাধ্যমে কাজে লাগাতে চান।

তিনি বলেন, শুদ্ধ উচ্চারণ, জড়তা কাটিয়ে ঋজু ভঙ্গীতে দাঁড়াবার সাহস অথবা প্রাত্যহিক জীবনের নান্দনিকতার পরশ আমি নির্দ্বিধায় থিয়েটারের কর্মশালা থেকেই পেয়েছি।’

এই নাট্য কর্মশালা অনেকটাই একাডেমিক নাট্য প্রশিক্ষণের মতোই। এই কর্মশালায় যিনি নাট্য বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা রাখেন না তিনিও অংশগ্রহণ করতে পারেন, আবার যিনি মোটামুটি অভিজ্ঞতা রাখেন তিনিও অংশগ্রহণ করতে পারেন। যার নাট্য বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে তিনি দেবেন আর যার নাট্য বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই তিনি নেবেন। আর এই আদান প্রদানের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবেন মাহমুদুল ইসলাম সেলিম আর শারমিন শর্মী।

এই পুরো কর্মশালাটিকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সেন্টার অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসেস।

এমএ