দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমবাজার সুরক্ষায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস। দেশটির শ্রম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প কলকারখানায় প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এসব শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছেন।

কোভিড পরিস্থিতিতে গত বছর ২৩ জুন প্রথম বার কোরিয়ার নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিউলে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপকালে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বিশেষ অনুরোধ জানান। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেন কিউনের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের তাগিদ দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।  

দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি

এদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পুনরাবৃত্তি এড়াতে দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্য যেকোনো দেশে ভ্রমণেচ্ছু বাংলাদেশি নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বাস্থ্য ও ভ্রমণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোরিয়ায় যখন করোনার প্রভাব বাড়তে থাকে তখন অনেকেই ছুটিতে গিয়ে করোনায় নিজ দেশে আটকে পড়েন। তাদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সে সময় দেশে এসে আটকে পড়াদের ফেরাতে কোরিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ও বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাস থেকে দ্বিতীয়  নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত প্রায় ৮শ ইপিএস কর্মী কোরিয়ায় ফিরতে সমর্থ হয়। 

সূত্র জানায়, ইপিএস কর্মীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়, বোয়েসেল ও সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় কোরিয়ায় আসতে সমর্থ হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থানরত রি এন্ট্রির সুযোগ প্রাপ্ত কর্মীদের দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরিয়ে আনতে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূত কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট দফতরে বার বার বৈঠক  করেন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক চিঠি দিয়ে সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। 

প্রথম নিষেধাজ্ঞার পর কোরিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি ঢাকাকে অবহিত করে বাংলাদেশ দূতাবাস সিউল ও রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। যার সারাংশ উঠে এসেছে গত ১২ এপ্রিলের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চারদিন পর ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি যাত্রীদের জন্য করোনা প্রতিরোধে কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- 
(ক) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও বোয়েসেল-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়াগামী যাত্রীকে কোভিড টেস্ট সম্পন্ন করে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) সম্পন্ন করতে হবে।
(খ) সাতদিনের সঙ্গনিরোধ থাকা অবস্থায় কোভিড টেস্ট শতভাগ নিশ্চয়তার স্বার্থে কোরিয়ান কিট দ্বারা সরকার অনুমোদিত একটি সুনির্দিষ্ট কোভিড সেন্টার থেকে টেস্ট শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় গমন নিশ্চিত করতে হবে।
(গ) সকল যাত্রীদের ট্রাভেল বিমার ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। 
(ঘ) এইচআরডি কোরিয়ার চাহিদা মোতাবেক বিশেষ ফ্লাইটে ইপিএস কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।
(ঙ) ইপিএস কর্মী ছাড়া যারা দক্ষিণ কোরিয়া গমন করবে তাদের তথ্য কোরিয়ান দূতাবাস ঢাকা কর্তৃক বোয়েসেলকে সরবরাহ করতে হবে।
(চ) সঙ্গনিরোধের পূর্বে কোভিড টেস্ট, সঙ্গনিরোধ এবং সঙ্গনিরোধ পরবর্তী কোভিড টেস্ট এর যাবতীয় ব্যয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বহন করবে। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও দেশে কোয়ারেন্টাইনে রেখে কর্মীদের পাঠানো উচিত। একই সঙ্গে কোরিয়া সরকারের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকা জরুরি। আগে থেকে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থা সতর্ক হলে দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যেত। 

সূত্র জানায়, গত ১৬ এপ্রিল দ্বিতীয়  নিষেধাজ্ঞার পরে কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে ২৩ এপ্রিল অনুরোধ জানান রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। বিশ্ব কোভিড পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট দফতর, একই সাথে  বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতির ওপর। বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞা ওঠানো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কোরিয়ার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা ওঠানোর বিষয়টি কোরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের ওপর নির্ভর করছে।

এইচকে