ইংরেজি ২০২৪ সাল। আরও একটি নতুন বছর। নতুন সূচনা। নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি, নতুন নতুন প্রত্যাশা। প্রবাসে বসবাস করলেও আমাদের মন পড়ে থাকে মা-মাটি-আর দেশের কাছে। কত স্মৃতি, কত সময় পার করেছি মাটির সোঁদা গন্ধে। প্রবাসে থাকলেও কি করে ভুলি সেই শেকড়ের টান? দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।

চড়াই, উতরাই পেরিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ছেড়ে আমাদের বিদেশে পাড়ি জমানোর একটাই উদ্দেশ্য– উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জীবন ব্যবস্থা আর পরিবারকে শক্তিশালী করা। সেজন্য আমরা আমাদের নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকি এবং সফলও হই।

কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিদেশের মাটিতে সমষ্টিগতভাবে আমরা ও আমাদের কমিউনিটি কতটা সফল? আমাদের কমিউনিটিতে অনেক চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার ও মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়নি। ফলে আমাদের অনুষ্ঠানগুলোতে স্বভাবতই আমন্ত্রণ পায় ভিনদেশি এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের এমপি ও মন্ত্রীরা। ফলে কি হচ্ছে, আমাদের মধ্যে থেকে কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছে না। আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের কমিউনিটিতে মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও শুধু  নিজেদের কারণেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি।

বাংলাদেশ ও বাঙালির রয়েছে এক সুদীর্ঘ গৌরবান্বিত ইতিহাস। কেউ এমনি এমনি দেয়নি আমাদের লাল সবুজের পতাকা। ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই বাংলাদেশ। আজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাঙালিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

বাংলাদেশকে যেভাবে আমরা ভালোবাসি, ঠিক তেমনি বিদেশের মাটিতেও দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে এখানকার মূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাংলা ভাষাকে প্রদেশের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর সে দায়িত্ব আমাদের সবার। শুধু নিজেদের জন্য কাজ করলে হবে না, কমিউনিটির সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সম্পৃক্ত করতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে, তাহলে বেরিয়ে আসবে একটি সুন্দর বাংলাদেশের চিত্র।

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের কমিউনিটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং সত্যিকারের দেশ প্রেম থাকলে তা আরও দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। প্রবাসে বসবাস করলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে আথাবাস্কা ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আমি আথাবাস্কা ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ার/প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার প্রধান কাজ হচ্ছে আমাদের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের হয়ে প্রাদেশিক এবং ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করা।

বিভিন্ন সময়ে আমরা সেমিনার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাদেশিক এবং ফেডারেল সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। সেখানে তুলে ধরি ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। সম্প্রতি আলবার্টার অ্যাডভান্স এডুকেশন মন্ত্রী রাজন সোহানীর আমন্ত্রণে আথাবাস্কা ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ইন্সটলেশনের সভায় অংশগ্রহণ করে খুবই ভালো লেগেছে।

ওই অনুষ্ঠানে আমরা ছাত্রদের সামর্থ্যের কথা বলেছি, আমরা ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছি, ছাত্রদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আর কি কি দরকার তা নিয়ে কথা বলেছি। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এমন অনেক কানাডিয়ান ছাত্র আছে, যারা প্রথমবার একটি পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নিতে যাচ্ছে ও তাদের পরিবার অনেক অনেক খুশি। অনেক পরিবারের সদস্য আছেন যারা প্রথমবারের মতো উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। তারাই আবার ওই কমিউনিটি থেকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী, প্রথমবারের মতো বিধায়ক বা এমপি হয়ে সংসদে যেতে চান। তাহলে আমরা বাংলাদেশিরা কেন একই স্বপ্ন দেখতে পারি না?

আমাদের স্বপ্ন একদিন অবশ্যই পূরণ হবে, আমাদের নিয়ে যাবে লক্ষ্যমাত্রায়। আর তা সম্ভব হবে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে মিলেমিশে এক হয়ে কাজ করি।

রাসেল রুপক
চেয়ারম্যান
গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন,
ইউনিভার্সিটি অব আথাবাস্কা,
কানাডা।